ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিরের চামড়া রফতানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

কুমিরের চামড়া রফতানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা ময়মনসিংহ ॥ ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কুমির প্রকল্প থেকে এ বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের চার শ’ ৩০টি কুমিরের চামড়া জাপানে রফতানি করা হয়েছে। জাপানের হরিওচি ট্রেডিং নামের একটি কোম্পানি এ চামড়া কিনে নেয়। প্রজেক্ট চত্বরে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব সোম। তিনি জানান, ৪৩০টি কুমিরের চামড়া থেকে এ আয় সম্ভব হয়েছে। তার মতে, চামড়া আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর এখান থেকে চামড়া কেনার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে রাজীব সোম প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, কুমিরের চামড়া এ দেশ থেকে রফতানির জন্য এশিয়া মহাদেশে প্রথম হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার দাফতরিক কাজ শেষ করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। কারণ এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। রাজীব সোম জানান, জাপানীরা বিভিন্ন সময় চামড়া যাচাই করে আমাদের কিছু টার্গেট দিয়ে যায়। সে অনুযায়ী ৬০ থেকে ৭০% ‘এ’ গ্রেডের চামড়া আমাদের রফতানির টার্গেট রয়েছে। এবারই প্রথম হওয়ায় হয়তো ওই টার্গেট আমরা পূরণ করতে পারব না। এ বছর হয়তো ১৫-২০% ‘এ’ গ্রেড পেতে পারে। মূল্যের ক্ষেত্রে গ্রেডিং একটা প্রধান বিষয়। আমরা আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই চেষ্টা করব এ গ্রেডকে সুপার গ্রেড, বি,সি ও ডি গ্রেডের চামড়াগুলোকে এ গ্রেডে উন্নত করা। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলেন, সাধারণত ছোট প্রকল্পগুলো থাইল্যান্ডসহ আশপাশের দেশগুলোতে রফতানি করতে পারলেও জাপানে চামড়া রফতানি একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কারণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত বাজার হলো এটি। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ফ্রান্সের বাজার দখল করতে চাইলে ও এক ধাপে উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে সে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমরা এশিয়ার সর্বোচ্চ বাজার দখল করতে সক্ষম হয়েছি। রাজীব সোম জানান, এ বছর কুমিরের মাংস ড্রাইফিড হিসেবে বিক্রি করা হবে। আগামীতে প্রশাসনিক যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তা বিদেশে এক্সপোর্ট করতে পারব। কুমিরের হার ও মাংস দুটোই রফতানির জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছরই বাংলাদেশ প্রথম কুমিরের চামড়া রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম লেখালো। এ ক্ষেত্রে কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দাফতরিক কাজ করতে সাময়িক সমস্য হয়েছে। আগামীতে হয়তো বা এ সমস্যা আর থাকবে না। তিনি রফতনিকৃত চামড়া বিক্রি করে কত টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হলো এ প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি জবাব না দিলেও আশা প্রকাশ করেন সোয়া থেকে দেড় কোটি টাকা আয় হতে পারে। তা নির্ভর করবে সে দেশে চামড়ার মান যাচাইয়ের ওপর। চামড়া গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করে তার ওপর মূল্য নির্ধারিত হবে। ২০১০ সালে জার্মানীর একটি বিশ^বিদ্যালয় গবেষণার জন্য এ খামার থেকে ৬৭টি কুমির রফতানি করা হয় এবং ২০১৩ সালে ৫টি কুমির বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য প্রদান করা হয় । ফার্ম ম্যানেজার আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৩ একর জমিতে গড়ে উঠা এ প্রকল্পে কুমির লালন-পালনের জন্য ৩৬টি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মাঝে ৪টি পুকুর অসুস্থ কুমিরের চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত। ছোট বড় মিলিয়ে এ খামারে বর্তমানে প্রায় ১৩শ’ কুমির রয়েছে। এ খামারে প্রায় ৪৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আগ্রহী মানুষ কুমির দেখতে আসে। যা কুমিরের বাণিজ্যিক উৎপাদনে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবের গ্রামে ২০০৪ সালে মাত্র ৭৫টি কুমির নিয়ে এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু করেছিল র‌্যাপটাইলস ফার্ম লিঃ নামের একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আবহাওয়া কুমির চাষের জন্য যেমন উপযোগী তেমনি বিদেশের মাটিতেও রয়েছে কুমিরের প্রচুর চাহিদা। দু’বিষয়কে সমন্বয় করলে খুব সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশ রফতানিকারক দেশের তালিকায় কুমির নিয়েও এগুতে পারে। কারিগরি সহায়তা ও অবকাঠামোগত সুবিধা পেলে বাংলাদেশের কুমির মালয়েশিয়া, জাপান, জার্মানসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের বাজার দখল করতে সক্ষম হবে। ২০০৪ সালে এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালেই প্রথম রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ।
×