ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিতাস-নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডে সহায়তা দিচ্ছে জাইকা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

তিতাস-নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডে সহায়তা দিচ্ছে জাইকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ তিতাস গ্যাস ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ড উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এ বিষয়ে ন্যাশনাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট ইন্সটেলেশন অব গ্যাস কমপ্রেসার এ্যাট (তিতাস লোকেশন-সি এ্যান্ড নরসিংদী গ্যাস ফিল্ড) শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ১৩৯ কোটি এবং জাইকার ঋণ ৭২৯ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি এবং একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া প্রকল্পে দুটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাসের পরিবর্তে প্রকল্পে একটি জিপ ও দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের সংস্থান রাখতেও পরামর্শ দেয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে প্রকল্পটির বিষয়ে বলেছেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির ওপর গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিতাস গ্যাস ফিল্ডের লোকেশন-সি ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডের ওয়েলহেড চাপ বর্ধিত করার মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ পাইপ লাইনের স্বাভাবিক চাপ বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিতাস লোকেশন-সি ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডে অবস্থিত কূপসমূহে ওয়েলহেড চাপ প্রতি বছর যে হারে কমে যাচ্ছে সে অনুযায়ী আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে তিতাস লোকেশন-সি তে এবং আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে নরসিংদী ফিল্ডে ওয়েলহেড কমপ্রেসার স্থাপন না করলে ওই দুদি কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাস এক হাজার পিএসআইজি চাপে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এ বাস্তবতায় গ্রিড লাইনের চাপের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের জন্য জাইকার অর্থায়নে এ দুটি ফিল্ড উন্নয়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে গত ১৬ জুন সরকারের সঙ্গে জাইকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে তিতাস লোকেশন-সি এবং নরসিংদী ফিল্ডের ওয়েলহেড চাপ বর্ধিতকরণের মাধ্যমে তিতাস লোকেশন-সি তে অবস্থিত কূপ থেকে দৈনিক ১৪০ ঘনফুট গ্যাস এবং নরসিংদী ফিল্ডে অবস্থিত কূপগুলো থেকে দৈনিক ৩০ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, তিতাস লোকেশন-সি এর জন্য আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ প্রতিটি দৈনিক ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি এবং নরসিংদী ফিল্ডের জন্য দৈনিক ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ওয়েলহেড গ্যাস কমপ্রেসার স্থাপন করা হবে। এছাড়া তিতাস ও নরসিংদী ফিল্ডে সাইট অফিসসহ দুটি স্টোর ভবন নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিতাস ফিল্ডের লোকেশন-সি এবং নরসিংদী ফিল্ড হতে নির্ধারিত চাপে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার ফলে বিদ্যুত ও সার কারখানায় গাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে ফলে দেশে নিবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এর ফলে শিল্পে উন্নয়ন সাধিত হবে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। তাই প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছর ভিত্তিক অর্থ চাহিদা ধরা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ছয় কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা।
×