ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপকর্ম নিয়ে আলোচনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপকর্ম নিয়ে আলোচনা হবে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্বাধীনতার পর ৪৩ বছরেও বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরে মন্ত্রণালয়ের কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এই প্রথম রেল মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ রবিবার চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ে (সিআরবি)। এটি বর্তমান সরকারের আমলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠক। গত এক বছরে এ ধরনের আরও ৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায়। তবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠক রুদ্ধদ্বার বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক। কারণ, এ বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য ছাড়া রেলের পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা থাকবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের মূল এজেন্ডায় রয়েছে রেলের অবনতির পেছনে ও রেল সম্পত্তি দখল করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তারা স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাশাপাশি কর্মচারীরাও কর্মকর্তাদের অনিয়মে সহযোগিতা করে নিজেদের পকেট পুরেছেন বিভিন্ন অনিয়মের মধ্য দিয়ে। এছাড়া রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নামে বরাদ্দকৃত বাসায় অবস্থান না নিয়ে প্রাইভেট বাসায় থাকছেন। এমনকি বরাদ্দ বাসার বিপরীতে ভাড়াটিয়া নিযুক্ত করে রেলের গ্যাস, বিদ্যুত, পানিসহ বিভিন্ন উপযোগ বিলের পরিমাণ বাড়িয়ে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, রেলে চাকরি করে অসাধুরা পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় খালি জায়গা দখলে নিয়ে ভাড়া বাণিজ্যসহ স্ট্যাম্পে বিক্রির মতো ঘটনা ঘটালেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থার নজির না থাকায় আজকের বৈঠকের এজেন্ডায় স্থান পাবে এ বিষয়টিও। জানা গেছে, প্রায় ১৫ সদস্যের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, অবকাঠামো ও উন্নয়নকল্পে পরিদর্শনপূর্বক সুপারিশ প্রদান করবেন বৈঠকে। পরিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পাহাড়তলীর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, ডিজেলশপ, লোকো সেড, সিজিপিওয়াই, মার্শালিং ইয়ার্ড ও চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের আধুনিকায়ন। এছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা ও অগ্রগতি, চট্টগ্রাম-ঢাকা কর্ড লাইন স্থাপন ও ব্যয় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও চিনকি আস্তানা-লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্পের উদ্বোধন বিষয়েও সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা রয়েছে এ বৈঠকে। এসব স্থাপনার উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কমিটি সিদ্ধান্ত প্রদান করবে। বৈঠকে আলোচিত এজেন্ডা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় পর্যালোচনা করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সিআরবির জিএম দফতর সূত্রে জানানো হয়, রেলের সংসদীয় কমিটির ৭ম বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, খলিল মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মোঃ নোমান এমপি, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এমপি, মোঃ আলী আজগর এমপি, মোঃ মিজানুর রহমান এমপি, ফাতেহা জোহরা এমপি, সংসদীয় কমিটির সচিব ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরোয়ার ভুঁইয়া, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেলের মহাপরিচালকসহ রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এতে সভাপতিত্ব করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। রেলের পূর্বাঞ্চলে প্রথমবারের মতো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক প্রসঙ্গে মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মোঃ মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, এই প্রথমবারের মতো পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরাই উপস্থিত থাকবেন। তবে মিডিয়াকে বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টর অব পাবলিক রিলেশন (ডিডিপিআর) কর্মকর্তার মাধ্যমে জানানো হবে। কমিটির সদস্যরা এ অঞ্চলে থাকা রেলের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করবেন। এ বৈঠক উপলক্ষে সিআরবিকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢেকে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা এ ভবনটির চতুর্দিকে যেমন পাহারা দিচ্ছে, তেমনি সিআরবি আঙ্গিনা তুলির আঁচড়ে রঙের ঝলমলে অবয়বে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও সিআরবি অঙ্গনে থাকা ৫০ বছরের পুরনো গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নান্দনিক এ এলাকায় সাধারণের চলাচল ও অবস্থানের ওপর কড়াকড়ি করা হয়েছে।
×