ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিটিভির সুবর্ণজয়ন্তীতে কবি শিল্পী লেখক মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

বিটিভির সুবর্ণজয়ন্তীতে কবি শিল্পী লেখক মেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের স্রোতে পথ চলার ৫০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। চলছে সরকারী এই সম্প্রচার মাধ্যমটির সুবর্ণজয়ন্তী। নেয়া হয়েছে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানসূচী। সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো কবি-শিল্পী-লেখক মেলা। সকাল থেকেই মুখরিত হয়ে ওঠে রামপুরার বিটিভি ভবনের অস্থায়ী উৎসব মঞ্চটি। চিত্রশিল্পীদের ছবি আঁকা, কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য ছিল তিন বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সম্মাননা প্রদান। সকালের পর্বে জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর বিকেলের আয়োজনে ৮০তম জন্মদিনের সম্মাননা জানানো হয় কীর্তিমান যুগল সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ও কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনকে। অন্যদিকে বিটিভির বাইরে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলেও তাঁদের জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। এছাড়াও বরেণ্য লেখকদ্বয়কে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে তাঁদের বাসভবনে উপস্থিত হয়েছিলেন বন্ধু-অনুরাগীসহ ভক্ত ও পাঠকরা। দুই পর্বে বিভক্ত বিটিভির সুবর্ণজয়ন্তীর তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানসূচীর সূচনা হয় সকালে। রঙ-তুলির পরশে ক্যানভাস রাঙিয়ে রকমারি বিষয়ের ছবি এঁকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন চিত্রশিল্পীরা। চিত্রকর্ম সৃজনের পাশাপাশি বসেছিল চিত্রকরদের জমাট আড্ডা। কাব্যমালার শিল্পিত উচ্চারণে নিজ কণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবিরা। এ পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিভির সাবেক উপমহাপরিচালক বরেণ্যশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সভাপতিত্ব করেন খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী। বিকেল তিনটায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানে ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে সংবর্ধনা জানানো হয় সৈয়দ শামসুল হক ও রাবেয়া খাতুনকে। এ পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ ও আইটিআই সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন উপমহাদেশখ্যাত বাঙালী বিবেকের অন্যতম কণ্ঠস্বর এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভির মহাপরিচালক আবদুল মান্নান। দুই বরেণ্য লেখককে সম্মাননা জানানোর আয়োজনটিতে পাঠ করা হয় কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনের জীবনী। পাশাপাশি তাঁর লেখা থেকেও পাঠ করা হয়। একইভাবে পাঠ করা হয় কবি সৈয়দ শামসুল হকের জীবনী। তাঁর কবিতা আবৃত্তি করে গেন্ডারিয়ার কিশোরালয় কচি-কাঁচা মেলার শিশুরা। লেখক™^য়কে সম্মাননা জানানোর চমৎকার এ অনুষ্ঠানে রাবেয়া খাতুনের কথাসাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা প্রসঙ্গে কথা বলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আর সব্যসাচী লেখকের নাটক নিয়ে আলাপ করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। ঘরে-বাইরে সৈয়দ হক প্রসঙ্গে কথা বলেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে আমার মা শীর্ষক আলোচনা করেন তাঁর মেয়ে কেকা ফেরদৌসী। সৈয়দ শামসুল হকের স্ব-কণ্ঠে কবিতাপাঠ পর্বটি ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে জন্মদিনের কেক কাটেন বরেণ্য দুই কথাশিল্পী। সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদন করে সহধর্মিণী আনোয়ারা সৈয়দ হক পাঠ করেন ‘তুমি কি জানো তুমি আমার কতো ও কী’। সৈয়দ হকের জীবনী ও অভিভাষণপত্র পাঠ করেন বাচিকশিল্পী আহ্্কাম উল্লাহ্্। রাবেয়া খাতুনের জীবনী ও অভিভাষণপত্র পাঠ করেন বাক্শিল্পী গোলাম সারোয়ার। সৈয়দ হক ও রাবেয়া খাতুনের হাতে অভিভাষণপত্র তুলে দেন অধ্যাপক আানিসুজ্জামান। সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (সংবাদ) শাহিদা আলম ও বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) বাহারউদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের সাহিত্য অঙ্গনে সৈয়দ শামসুল হক ও রাবেয়া খাতুন যেন এক জোড়া গোলাপ ফুল। দেশের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাঁরা একের পর এক কালজয়ী লেখা উপহার দিয়ে চলেছেন। তাঁদের লেখা আমাদের চলার পথে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন রচনার মধ্য দিয়ে এই লেখকদ্বয় দেশ ও জাতির মনন গঠনে যে অবদান রেখে চলেছেন, তা অব্যাহত থাকুক। জন্মদিনে আপন অনুভূতি প্রকাশ করে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, জয় হোক সবার। দেশটা ভাল থাকুক, দেশের মানুষ ভাল থাকুক। সবাইকে নিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার জন্মদিনে বিটিভি যে সম্মাননা দিল, তাতে আমি অভিভূত। সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে বক্তারা বলেন, শাণিত রচনাবলীর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঋদ্ধ করে চলেছেন তিনি। রাবেয়া খাতুন সম্পর্কে বলেন, পঞ্চাশ দশক থেকে আজও নিরন্তর সচল রয়েছে তাঁর কলমটি। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা রচনাবলী থেকে পাঠ করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ। পরিবেশিত হয় তাঁর রচিত সিনেমার গান ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’। সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেন- সুমন রাহা, কোনাল, ঐশিকা নদী, সাব্বির প্রমুখ। প্রায় তিন ঘণ্টার বর্ণিল অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কবি আসাদ চৌধুরী। উদীচীর নতুন কমিটি গঠন ॥ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীকে সভাপতি এবং প্রবীর সরদারকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। শনিবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উদীচীর দুই দিনব্যাপী ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলনে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদের জন্য এই নতুন কমিটি গঠিত হয়। নতুন কমিটিতে সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জামসেদ আনোয়ার তপন, অমিত রঞ্জন দে ও সঙ্গীত ইমাম এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন বিমল মজুমদার। উল্লেখ্য, কামাল লোহানী এবং প্রবীর সরদার তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্বে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। ‘নিত্য বাজুক বজ্রবীণা, মানুষ জাগুক জয়ে’ সেøাগানে শুক্রবার উদ্বোধন হওয়া উদীচীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন ছিল শনিবার। এ দিন সকালে শুরু হয় সম্মেলনের সাংগঠনিক পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন। শুধু প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত এ অধিবেশনে গত দুই বছরে উদীচীর কর্মকাণ্ডের খতিয়ান সংবলিত সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা ও তা গৃহীত হওয়ার পর মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় সম্মেলনের নির্বাচনী অধিবেশন। এ পর্বে নানা বিচার-বিশ্লেষণ ও আলোচনা শেষে ৯১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির ৮৭ জন সদস্যের নাম সম্মেলনে নির্বাচিত করা হয়। আর বাকি চারজন সদস্যের নাম পরবর্তীতে কো-অপ্ট করা হবে বলে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নতুন কমিটির সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। সাংগঠনিক অধিবেশন শেষে সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। শিফটিং স্যান্ডস প্রদর্শনীর আলোচনা ॥ গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে চলছে শিল্পী নাসিমা খানের চিত্রপ্রদর্শনী শিফটিং স্যান্ডস। প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় ‘টুয়ার্ডস হরাইজন : রিপ্রেজেন্টিং ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন- গুণী সঙ্গীত সমালোচক আলিমুর রহমান খান, বিখ্যাত স্থপতি রফিক আজম এবং স্থপতি ও শিল্পী নাসিমা খান। আলোচনায় বক্তারা প্রাকৃতিক দৃশ্য কেন শিল্পীর কাছে সব সময় এত আকর্ষণীয়? এর কোন বিষয়বস্তু বারংবার উপস্থাপিত হয়? প্রাকৃতিক দৃশ্য কি কোন আধ্যাত্মিক মাত্রা যোগ করে? এ সব চিত্তাকর্ষক প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করেছেন বক্তারা। কচি-কাঁচার শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ও বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা দুই দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং বিজ্ঞানমেলা ও সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। প্রতিযোগিতায় বয়সভিত্তিক তিনটি শাখায় পাঁচ শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। শনিবার শেষ দিনের সকালে অনুষ্ঠিত হয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। উপস্থিত ছিলেন মেলার সহসভাপতি দিল মনোয়ারা মনু ও বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী অধ্যাপক কাজী মদিনা। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- কাজী রোজী, কাজী মদিনা, রেজিনা ওয়ালি লীনা, শাকিলা মতিন মৃদুলা, আলেয়া ফেরদৌসী, মাশকুরে সাত্তার কল্লোল, ফয়জুল আলম পাপ্পু, এসএম মহসীন ও সাগর লোহানী। বিজ্ঞানমেলা ও সায়েন্স অলিম্পিয়াডে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ মোঃ সায়েদুর রহমান, প্রফেসর শামসুর রহমান সেলু, এনামুল হক খান ও ডাঃ সিএম শামীম কবির। আগামী শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় সকল প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তথ্যচিত্র সাহসী যাত্রার প্রিমিয়া ॥ সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারী সাহায্য সংস্থা সীড। এবার সংস্থাটি সেসব শিশুদের নিয়ে নির্মাণ করেছে তথ্যচিত্র সাহসী যাত্রা। শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে তথ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে ‘পরিবর্তনে আমরাও অংশীদার : অটিস্টিক, বুদ্ধি ও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী মানুষ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
×