ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন

আবাসন খাত চাঙ্গা করতে বেশ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

আবাসন খাত চাঙ্গা করতে বেশ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী

রহিম শেখ ॥ ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রিতে মন্দাভাব এবং নানামুখী সঙ্কটে থাকা আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ফান্ড গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা সামনে রেখে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্লানকে (ড্যাপ) সংশোধন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিপর্যস্ত আবাসন খাতকে গতিশীল করতে আয়কর আইনের ১৯-এর ‘খ’ ধারা পুনর্বহাল এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া আগামীতে সরকারীভাবে প্লটের প্রকল্প নেয়া হবে না। নেয়া হবে এ্যাপার্টমেন্টের প্রকল্প। আজ রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এমন ঘোষণা আসতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, গত কয়েক বছরে গ্যাস-বিদ্যুত সঙ্কট, রাজউকের বিধিমালা, প্রকল্প অনুমোদন না দিয়ে বছরের পর বছর তা আটকে রাখা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ নানামুখী সঙ্কটে ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে যায়। প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারায় স্থবির হয়ে যায় আবাসন খাত। এতে এ খাতে বিনিয়োগ করা ৮০ হাজার কোটি টাকার ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আবাসন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় চার শতাধিক শিল্প খাতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রিই বন্ধ থাকেনি, বন্ধ থাকে নির্মাণকাজও। হাজার হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকে। তবে চলতি বছরের শুরুতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ায় প্রাণ ফিরে পায় আবাসন খাত। আবাসন খাতের দুর্যোগ ঠেকাতে এবং এ ব্যবসার গতি ফিরিয়ে আনতে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা চেয়ে একাধিক বৈঠক করেন রিহ্যাব নেতারা। অবশেষে ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রিতে মন্দাভাব এবং নানামুখী সঙ্কটে থাকা আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রবিবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসবেন। পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আবাসন খাততে বাঁচিয়ে রাখতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ফান্ড গঠন করা হবে। পাশাপাশি রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) সংশোধন, রাজউকের প্লট বিক্রি বন্ধ, ১৯-এর ‘খ’ ধারা পুনর্বহালের ঘোষণা আসতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। এর আগে গত বুধবার রিহ্যাব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেছেন, আমি আপনাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব দাবিদাওয়া পেশ করব। তিনি বলেন, আমি একজন মন্ত্রী হতে পারি কিন্তু আমিও রিহ্যাবের সদস্য। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব-আবাসন খাতে টাকা বিনিয়োগ করলে তা কোথা থেকে এলো সেই প্রশ্ন যেন তোলা না হয়। একই সঙ্গে আয়কর আইনের ১৯ এর ‘খ’ ধারা পুনর্বহাল করার সুপারিশ করা হবে। কেননা, এই আইন পুনর্বহাল করা না হলে দেশের অর্থ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় চলে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, আবাসন খাতকে গতিশীল করতে অবশ্যই সরকারী প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। আমি সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা হিসেবে দেয়ার আহ্বান জানাব। আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা সামনে রেখে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্লানকে (ড্যাপ) সংশোধন করা হবে বলে মন্ত্রী জানান। নতুন এই পরিকল্পনায় বর্তমান ড্যাপের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা হবে বলেও জানান তিনি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে উল্লেখ করে পূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, রাজউক নতুন করে আর কোন প্লট বিক্রি করবে না। তিনি রিহ্যাবের অনুষ্ঠানে আরও বলেন, কোন দেশেই ব্যাংক ঋণে সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের উপরে না। কিন্তু আমাদের দেশে সুদের হার অত্যন্ত বেশি। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাবি জানাবÑ এই বিষয়টিতে যেন নজর দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, গত বাজেটে ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও বাড়িয়ে দেয় রেজিস্ট্রেশন ফিসহ অন্যান্য ট্যাক্স। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বাড়ানোর কারণে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে বর্ধিত রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কার্যকর হওয়ায় ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর বাড়ানোয় ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রির ক্ষেত্রে গেইন ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে ফ্ল্যাট ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে আশার কথা যে পূর্তমন্ত্রী বলেছেন, রাজউক আর কোন প্লট দেবে না। তাতে করে জমির দাম সমন্বয় হবে এবং ফ্ল্যাটের দামও কম থাকবে। আমাদের দাবি ছিল আবাসন খাতের জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেয়া হোক। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী। যা এ খাতের জন্য ইতিবাচক হবে। ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের ব্যাপারেও তিনি উপর মহলে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ক্রেতাদের জন্য ফ্ল্যাট সহজলভ্য হবে বলে তিনি মনে করেন।
×