ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমিরাত লোক নিচ্ছে না ॥ ভিসা জটিলতা নিরসনে জোর চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

আমিরাত লোক নিচ্ছে  না ॥ ভিসা জটিলতা নিরসনে জোর চেষ্টা

ফিরোজ মান্না ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা জটিলতার বিষয়টির সুরাহার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটি সফরের পর থেকেই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি বাংলাদেশী নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা দেয়া বন্ধ করে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হিসাবে পরিচিত। ভিসা বন্ধ করায় দেশের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে এই বাজারে কিছু নারীকর্মী ছাড়া পুরুষ কর্মী নেয়া হচ্ছে না। সূত্র জানিয়েছে, তাদের যে পরিমাণ কর্মী প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি কর্মী এখন কাজ করছে। তাই এ কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানের কোন নাগরিককেই ভিসা দেয়া হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দেশগুলো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদের ভিসা জটিলতা নিরসন করেছে। এখন শুধু বাংলাদেশই ভিসা জটিলতার মধ্যে রয়ে গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, অল্পদিনের মধ্যে আমিরাতে ভিসা জটিলতার নিরসন হবে। প্র্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমিরাতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা অচিরেই সমাধান করা হবে। আমিরাতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে। প্রতিনিধিদল দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিসা জটিলতার বিষয়ে আলোচনা করবেন। আমরা জেনেছি, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক (ইউএই) স্বাক্ষর করার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা মহিলা কর্মী (হাউসমেট) নিচ্ছে। ভিসা জটিলতা দূর করার পরই কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত তিনটি কারণে দেশটি কর্মী নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা বন্ধ রেখেছে। একটি হচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীরা বেশ কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত করেছে। আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, দেশটির একটি কোম্পানির ডাইনিং হলে ভারত, পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী কর্মীরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি করেছিল। ওই সময় দেশটির কর্তৃপক্ষ এই তিন দেশের ভিসা বন্ধ করে দেয়। পরে ভারত ও পাকিস্তান তাদের জটিলতা কাটিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিষয়টি ঝুলে আছে। সবচেযে বড় কারণ হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০-এর ভেন্যু’ বিষয়ে বাংলাদেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও কোন লাভ হয়নি। তবে এটাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো যদি কূটনৈতিক তৎপরতা থাকত। আসলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই কিছু না কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সব দেশেই থাকা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে কর্মসংস্থান, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে দেশটিতে ট্রানজিট ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশের নাগরিকরা। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে সীমিত আকারে ভিসা দেয়া হচ্ছে। ১১ মাস ধরে দেশটিতে কোন প্রকার ভিসা না দেয়ায় বাংলাদেশী নাগরিকরা নানা রকম সমস্যায় পড়েছেন। দেশটিতে শুধু কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রেই নয় ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট নাগরিকরাও সেখানে কোন ভিসা পাচ্ছেন না। ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজক হিসেবে শুরুতে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল বাংলাদেশ। এতে অসন্তুষ্ট হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর বিষয়টি সরকার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মনে করছেন জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা।
×