ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হকার আর লাট ভাইদের দখলে ফুটপাথ ॥ দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

হকার আর লাট ভাইদের দখলে ফুটপাথ ॥ দেখার কেউ নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুটপাথ সর্বসাধারণের চলাচলের স্থান হলেও এখন আর তা জনগণের হাঁটাচলার দখলে নেই, বেদখল হয়ে হকার কিংবা মোটরসাইকেল চালকদের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নগরীতে বসবাসকারী জনমনে এ নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তুষ্টি থাকলেও ফুটপাথ দখল নিয়ে তেমন কোন ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি এখনও। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর একটা, বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেট ঢোকার পথে রাস্তায় গাডির দীর্ঘ সারি। গাড়ি থেকে গাড়ির দূরত্ব নেই বললেই চলে, ফুটপাথে দ্রুত গতিতে হাঁটছে মানুষ। পিছন থেকে দ্রুত বেগে ছুটে গেল ৩টি মোটরসাইকেল, কর্কশ হর্ণ বাজিয়ে হাঁটা পথ দিয়েই! ঘটনাটি তেজগাঁও থানার সামনের। তেঁজকুনিপাড়ার বাসিন্দা সোহেল বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এখানে ফুটপাথ দিয়ে অবাধে মোটরসাইকেল চলছে, ঘটনাস্থলটি থানার সম্মুখে হওয়ার পরও দেখার কেউ নেই! ঘটনাস্থলের কাছেই থাকা এক পুলিশ সদস্য পরিচয় না দিয়ে জানান, আসলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না, এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে; এক্ষেত্রে সচেতনতাই মূল প্রতিকার। তবে অভিযোগ রয়েছে খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ফুটপাথ বেদখল হয় প্রতিনিয়ত। নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, ফার্মগেটকে ঘিরে থাকা প্রায় সব কটি ফুটপাথই বেদখল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। মহাখালী কাঁচা বাজারের সম্মুখের ফুটপাথে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে কাপড়-চোপড়, জুতোসহ হরেক রকমের রঙ বেরঙের দোকান। এখানে হাঁটাচলায় ভোগান্তি অনেক বেশি। কাঁচা বাজারের সম্মুখে ফুটপাথ ছাড়িয়ে মূল রাস্তার ওপর অনেকটা জায়গাজুড়ে ময়লার স্তূপ। ফুটপাথ ছেড়ে মূল রাস্তা ধরেও হাঁটার স্থান নেই এখানে, পিছন থেকে ক্রমাগত ধেয়ে আসে বড় বড় গাড়ি। সরকারী তিতুমীর কলেজের ছাত্র রনি, প্রতিদিন এ রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে হয় তাকে। তিনি জানান, মহাখালীর আশপাশের প্রতিটি ফুটপাথ তো আছেই এখানে রাস্তাও বেদখল হয়ে আছে ময়লার স্তূপে। এই যে মাত্র যে গাড়িটি আমার শরীর ছুয়ে গেল যদি কোন কিছু হয়ে যেত তাহলে কে নিত দায়িত্ব? রাত ৮টা শাহবাগ মোড়। বিএসএমইউ’র সম্মুখের ফুটপাথ। বেদখল করে সেখানে পান সিগারেটের দোকান। আবার একই দৃশ্য বিএসএমইউ’র উল্টো পাশে ফুটপাথে। ঘড়িতে তখন ৮টা ২০। আজিজ সুপার মার্কেটের সম্মুখের ফুটপাথে শীত বস্ত্রের পসরা। সবাই মহাব্যস্ত হয়ে শীত বস্ত্র কিনছেন। রাস্তায় দ্রুত চলাচলের কোন উপায় নেই। সেখানেই কথা হয় পথচারী পাভেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে অবস্থা একটু ভাল। তবু ঠিক মতো হাঁটতে পারছি না। নিউমার্কেট কিংবা ফার্মগেট হলে কি অবস্থা হতো ভাবা যায়? খুচরা ও অল্পমূল্যে কেনাকাটার স্থান নিউমার্কেট। বলা যায় এই ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেটের আশপাশ এখন আর কোন ফুটপাথ মানুুষের হাঁটাচলার জন্য অবশিষ্ট নেই। ফুটপাথের যেখানেই চোখ পড়ে সেখানেই কোন না কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দোকান। এসব দোকানপাট সাময়িক সময়ের জন্য চাহিদা মেটালেও সৃষ্টি করেছে দীর্ঘমেয়াদী জনদুর্ভোগ। নিউমার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের উল্টো পাশের ফুটপাথে নারী ব্যতিত অন্য কারও হাঁটার সুযোগ নেই। নারীতে নারীতে শরীর ঘেসা অনেক পুরুষ সঙ্গত কারণেই এই ফুটপাথে হাঁটেন না। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সম্মুখে কথা হয় ঢাকা কলেজের ছাত্র লক্ষণ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই পাশের ফুটপাথ ধওে তো হাঁটার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু ঐ পাশে হাঁটতেই পারবেন না। কিন্তু দেখেন এই পাশের কি অবস্থা। কত রকমের দোকান। হাঁটাচলার প্রতিমুহূর্তেই থমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে ফুটপাথ আসলে কাদের, আমাদের নাকি দোকানদের? নীলক্ষেতের সম্মুখে কথা হয় বই বিক্রেতা জসিমের সঙ্গে। এখানে বসার অনুমতি পেলেন কোথায়? প্রশ্নে অনেকটা রেগে তিনি জানতে চান, আপনি কে? সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়ার পর তিনি কথা বলতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, আপনাদের তো সবই জানার কথা। নিউমার্কেটের উল্টো পাশের ফুটপাথে কথা হয় এক নারীর সঙ্গে। নাম মোছা: রুনা বেগম। তার বয়স ৫০ এর কোঠায়। এই ভদ্র মহিলা জানান, বাবা কি বলব, তোমরা এখনও ছোট তারপরও সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ। যে ফুটপাথ ছিল সাধারণ জনগণের এখন তা দোকান মালিকদের। আসলে এগুলো সবই নেতাকর্মী কিংবা প্রশাসনের ছত্রছায়ায়। শুধু ফার্মগেট, মহাখালী, শাহবাগ, নিউমার্কেট নয়; নগরীর প্রতিটি এলাকার একই চিত্র। এ নিয়ে দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ থাকলেও প্রতিকার নেই কোন। কখনও প্রতিকার নিয়ে কথা উঠলেই, ফুটপাথ থেকে উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দখলদারদের; কিন্তু কয়েকদিন পর সেই পুরানো চিত্র।
×