ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চারুকলায় চার দিনব্যাপী জয়নুল মেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

চারুকলায় চার দিনব্যাপী জয়নুল মেলা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাঁর রং-তুলির ছোঁয়া আর প্রাণশক্তিতে ভর করেই বিকশিত হয়েছিল এদেশের চারুশিল্প আন্দোলন। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টে আপন ক্যানভাস রাঙানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক তৎপরতায় গড়েছিলেন বাংলার চারুকলার ভিত্তি। আর এভাবেই স্বদেশের বুকে শিল্পের ছবি এঁকে হয়েছিলেন শিল্পাচার্য। আগামী ২৯ ডিসেম্বর সেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শততম জন্মবার্ষিকী। শিল্পের পথের দিশারী এই শিল্পীর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে চলছে নানা আয়োজনে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে কিংবদন্তি এই চারুশিল্পীকে জানানো হচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেই সূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শুরু হলো চার দিনের জয়নুল মেলা। অনুষদের প্রতিষ্ঠাতার স্মরণে শুক্রবার সকাল থেকেই মুখরিত হয়ে ওঠে বৃক্ষ আর লতাপাতায় আবৃত সবুজ-শ্যামল আঙ্গিনাটি। চারুশিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে চারুকলা ক্যাম্পাস। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের সকাল, বর্ণময় বিকেল, নদীতে ভাসমান নৌকা কিংবা প্রান্তিক জনপদের লুকায়িত সৌন্দর্য অথবা জনমানুষের যাপিত জীবন বরাবরই শিল্প সৃষ্টিতে প্রভাবিত করেছে শিল্পাচার্যকে। তাই তো তাঁর মনন ও চিন্তনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে জয়নুল মেলায়। আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে চারু ও কারুকলার রকমারি নিদর্শন দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা ক্যাম্পাস। অনুষদের ৭টি বিভাগের ৭টি স্টল এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী অঞ্চলের শিল্পীদের তৈরি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে শিল্পীকে নিবেদিত এই মেলা। পৌষের শীতমাখা সকালে চারদিনের মেলার যাত্রাপথের সূচনা হয়। মেলা উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, সাবেক ডিন অধ্যাপক আবুল বারক্্ আলভী, জয়নুল আবেদিনের ছেলে খায়রুল আবেদিনসহ অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জয়নুল আবেদিন শুধু একজন শিল্পীর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। শিল্পের প্রসারের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন একইসঙ্গে জ্ঞান, শিল্প ও দর্শনের আচার্য। নিজেকে এমন একটি অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যে কারণে তিনি বাঙালী সমাজে চিরকাল প্রাতঃস্মরণীয় পুরুষ। জয়নুল আবেদিনের ছেলে খায়রুল আবেদিন এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জয়নুল আবেদিন যেমন আমাদের পরিবারের তার চেয়ে বেশি দেশবাসীর। আর সেটিই প্রমাণিত হচ্ছে বাবার শতবর্ষে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বাঙালী সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ জয়নুলের আরাধ্য পুরুষ রবীন্দ্রনাথের ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শুরু হয় উদ্বোধনী আলোচনা। আলোচনা শেষে ছিল ঢাক-ঢোলের সুর মূর্ছনা। বিকেলে চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করে ভিন্ন আঙ্গিকের ব্যান্ডদল জলের গান। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে মেলা। চলবে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ শনিবার মেলার দ্বিতীয় দিন। এদিন সন্ধ্যায় লালন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান পরিবেশন করবে শান্তমারিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় দিন রবিবারের আয়োজনে থাকবে জনপ্রিয় বাউলদের গানের পরিবেশনা। মেলার সমাপনী দিন সোমবারে আয়োজনটি হবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষের দিনটিতে সকাল থেকেই শুরু হবে নানা কর্মসূচী। সকাল ১০টায় উদ্বোধনী সঙ্গীত দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠানমালা। চারুকলার শিল্পীরা গাইবেন দু’টি সমবেত সঙ্গীত। এরপর রয়েছে সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা পর্ব। অনুষ্ঠানে চারুকলা অনুষদের বার্ষিক প্রদর্শনী ও শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এদিনের আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করবে চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। বিকেলের আয়োজনে অংশ নেবেন চারুকলার পুরনোরা। দীর্ঘকাল পর তাঁরা পেছন ফিরে তাকাবেন। স্মৃতির আয়নায় পেছনে ফিরে গিয়ে চলবে আলোচনা ও জমাট আড্ডা। এ পর্বের উপস্থাপনা করবেন খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন। সন্ধ্যায় বসবে গানের আসর। গান শোনাবেন নাশিদ কামাল, কৃষ্ণকলিসহ জনপ্রিয় শিল্পীরা। গাইবে চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া ব্যান্ড মেঘদল, বাউলা, তনুশ্রী ও মাস্টারব্যান্ড। ছায়ানটের স্মরণে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ॥ শিল্পের ভুবন থেকে অদেখার ভুবনে পাড়ি জমিয়েছেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। পথিকৃৎ এই চিত্রকরকে নানা আয়োজনে জানানো হচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেই সূত্রে শুক্রবার শিল্পীকে স্মরণ করল ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। পৌষের সন্ধ্যায় গানের সুরে, বাঁশির মধুর শব্দধনি ও বিশিষ্টজনদের কথনে হৃদয় উৎসারিত ভালোবাসা জানানো হয় প্রয়াত এই শিল্পীকে। প্রতিষ্ঠানটির রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কাইয়ুম চৌধুরীকে নিবেদিত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সভাপতি সন্্জীদা খাতুন, সহ-সভাপতি ডাঃ সারওয়ার আলী ও আবুল হাসনাত। সমবেত কণ্ঠে শুভ্রসমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল গানের সূরে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রাগ ভীমপলশ্রী পরিবেশন করেন লতিফুন জুলিও। বাঁশিতে রাগ বাগেশ্রীর সুর তোলেন বাঁশরিয়া মর্তুজা কবির মুরাদ। লোকে বলিত তুমি আছ গানটি পরিবেশন করেন তৃপ্তি খান। ইফ্্ফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে গীত হয় জীবন নদীর ওপারে। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান মিতা হক, সুমন মজুমদার, শারমিন সাথী ইসলাম ও প্রমিলা চক্রবর্তী। জাতীয় পরিবেশনের মাধ্যমে স্মরণানুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। জয়নুল, জসীম, আল মুতীর জন্মজয়ন্তীর আয়োজন ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসীম উদ্্দীন এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উদ্যোগে শুক্রবার চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং বিজ্ঞান মেলা ও সাইন্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। কচি-কাঁচা ভবন প্রাঙ্গণে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবুল বারক্্ আলভী। প্রতিযোগিতায় বয়সভিত্তিক তিনটি শাখায় প্রায় ৩০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। একইদিনে বিজ্ঞান মেলা ও সাইন্স অলিম্পিয়াড উদ্বোধন হয়। এতে বিজ্ঞান বিষয়ক আবিষ্কার প্রদর্শন এবং সাইন্স অলিম্পিয়াডে বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান প্রদর্শনী আজ শনিবার পর্যন্ত চলবে। আগামী ২ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ’॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের কবিতা নিয়ে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের দশম আবৃত্তি প্রযোজনা ‘সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ’-এর নবম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে। সামসুজ্জামান বাবুর গ্রন্থনা ও এ কে এম সামছুদ্দোহার নির্দেশিত প্রযোজনাটি একক ও সমবেত আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়।
×