ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এমপি ছবি বিশ্বাস হত্যা চেষ্টা ও গাড়ি ভাংচুর মামলা

গয়েশ্বর গ্রেফতার ॥ তিন দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

গয়েশ্বর গ্রেফতার ॥ তিন দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি মামলায় গত বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসকে হত্যাচেষ্টা ও তাঁর গাড়ি ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালত তাঁকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। গত বুধবার দুপুরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া বকশীবাজার এলাকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে যান। তাঁর সঙ্গে শত শত নেতাকর্মী জোরপূর্বক আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাঁধা দিলে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। নেতাকর্মীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। সংঘর্ষ চানখাঁরপুল, বুয়েট, পলাশী মোড়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা, মাদ্রাসা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এক মহিলা পুলিশসহ দুই পুলিশ, পথচারী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ, সরকারদলীয় সমর্থক, ২০ দলীয় নেতাকর্মীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে অন্তত ৩৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৫০ রাউন্ড রাবারবুলেট ছুড়তে হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে বিএনপি কর্মীদের হামলার শিকার হন নেত্রকোনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস। গাড়ির সামনে সংসদ সদস্য লেখা স্টিকার দেখেই ২০ দলীয় জোটের ৪০ থেকে ৫০ জন লাঠিসোটা নিয়ে গাড়িটিতে হামলা চালায়। লাঠির আঘাতে ছবি বিশ্বাসের মাথায় ও কানে মারাত্মক জখম হয়। আহত সংসদ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের একজন আফজাল হোসেনকে (২২) তাৎক্ষণিকভাবে ২ বছরের কারাদ- দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সারোয়ার আলম। সংঘর্ষের ঘটনায় গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর চকবাজার ও শাহবাগ মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। চকবাজার থানার মামলায় এজাহারনামীয় ৭০ জনসহ অজ্ঞাত আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়। আর শাহবাগ থানায় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসকে হত্যাচেষ্টা, তাঁর গাড়ি ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারি হেলাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসকে হত্যাচেষ্টার উস্কানিদাতার অভিযোগ আনা হয়। শুক্রবার সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ভোরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসকে হত্যাচেষ্টা, তাঁর গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হাবিল হোসেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে বিক্ষোভ করেন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) সালমা হাই টুনি। তিনি আসামির জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে পাঠানোর দাবি জানান। আইনজীবীরা আসামির জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে পাঠানোর দাবি জানান। আর আসামির পক্ষে সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শুনানি করেন। তাঁরা আসামির জামিন মঞ্জুরের আর্জি করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম তসরুজ্জামান জামিন নাকচ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠান। আসামিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রেখে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে শাহবাগ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান।
×