ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ বিষয়ে পাকিস্তানে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য

জঙ্গীদের বিচার সামরিক আদালতে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

জঙ্গীদের বিচার সামরিক আদালতে

পাকিস্তানে সামরিক আদালতে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বিচার করা হবে। সেজন্য সন্ত্রাস সম্পর্কিত মামলাগুলোর শুনানির জন্য দেশটিতে এরূপ আদালত গঠন করা হবে। একটি স্কুলে জঙ্গীদের হামলায় দেড়শ’ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিল। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছেন, সন্ত্রাসীরা যাতে তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপের জন্য কড়া মাসুল দেয়, তা নিশ্চিত করতে ওই পদক্ষেপ সহায়ক হবে। গত সপ্তাহে তালেবান যোদ্ধারা পেশোয়ারে সেনা পরিচালিত এক স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩৩টি শিশুসহ ১৫২ জনকে হত্যা করে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সন্ত্রাস মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বুধবার রাজধানী ইসলামাবাদে আলোচনায় মিলিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো নতুন আদালত গঠনের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছায়। নওয়াজ শরীফের আহূত ওই বৈঠকে দেশটির অধিকাংশ মূলধারার রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিনিধি পাঠায়। দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক নেতৃত্ব সন্ত্রাসবিরোধী এক ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করে। এতে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের জন্য বিশেষ আদালত গঠন এবং জিহাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানোর প্রস্তাব করা হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনযোগে দেয়া এক ভাষণে ঐ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। খবর বিবিসি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। প্রধানমন্ত্রী সামরিক আদালতগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু বলেননি। তবে তিনি ঐ মতৈক্যকে পাকিস্তানের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন বলে অভিহিত করেন। এর আগে তিনি বলেন, দেশে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সেজন্য অস্বাভাবিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ জাতি ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না, যদি আমরা এখন কোন কিছু না করি। তিনি বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত জেগে ওঠার আগেই আরেক বিয়োগান্তক ঘটনার আঘাতের জন্য পাকিস্তানের রাজনীতিকদের অপেক্ষা করা উচিত নয়। ওই বৈঠকে ঘৃণাব্যঞ্জক বক্তৃতা প্রচার ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অর্থ সংস্থানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও মতৈক্য হয় বলে জানা যায়। বিরোধী নেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ জানান, সামরিক আদালতগুলো দু’বছর মেয়াদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ঐসব আদালতে কেবল সন্ত্রাসীদেরই বিচার করা হবে এবং সেগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হবে না। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করাই সামরিক আদালত গঠনের উদ্দেশ্য। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় খুব বেশি ফাঁক-ফোকড় রয়েছে এবং এটি প্রার্থিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলার পর পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা জোরদার করেছে। ওই হামলার পর মৃত্যুদ- কার্যকর করার ওপর ইতোপূর্বে আরোপিত একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। সেনাবাহিনী ও দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের উপজাতীয় এলাকাগুলোতে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করেছে। নওয়াজ শরীফ বলেন, পেশোয়ারের দুঃখজনক ঘটনার পর পাকিস্তান বদলে গেছে। দেশে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, সাম্প্রদায়িকতা ও অসহিষ্ণুতার কোন স্থান হবে না। তিনি বলেন, দেশে কোন সশস্ত্র মিলিশিয়াকে কাজ করতে দেয়া হবে না এবং সন্ত্রাসী ব্যক্তি ও সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের পথ বন্ধ করে দেয়া হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো যাতে ভিন্ন নামে নতুন করে আত্মপ্রকাশ না করতে পারে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। কয়েকটি সূত্রে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলা হয়, ভারত অধিকৃত কাশ্মীর ও অন্যত্র লড়াইরত জিহাদী সংগঠনগুলোকে নিরস্ত্র করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দমন অভিযান শুরু করা হবে। বিশেষ আদালতে এসব দলের নেতাদের বিচার করা হবে। তাদের দফতর এবং তাদের দাতব্য তৎপরতা বন্ধ করে দেয়া হবে।
×