ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাউফলের শংকর ধুপি কি দেশ ছেড়ে চলে যাবে?

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

বাউফলের শংকর ধুপি কি দেশ ছেড়ে চলে যাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৩ ডিসেম্বর ॥ বাউফলে ক্রমেই বেড়ে চলেছে সংখ্যালঘুদের ওপর বহুমাত্রিক অত্যাচার-নির্যাতন। জাল জালিয়াতি করে জায়গা-জমি দখল, ক্ষেতের পাকা ধান লুট, গাছ-মাছ লুট, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, জীবননাশের হুমকি, সালিশীর নামে প্রহসন এবং দেশ ত্যাগের হুমকিসহ নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাঁরা। নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে সেখানেও সহযোগিতার পরিবর্তে উল্টো তারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কেশবপুর ইউপির কেশবপুর গ্রামের শংকর ধুপির বসতবাড়িসহ ৪ একর ৯০ শতাংশ জমি দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন মোল্লা, হাবিবুর রহমান সিকদার, আমির হোসেন মোল্লা ও মজিবুর মুন্সী গং ১৪টি মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে এবং গাছ মাছ ও জমির ধান লুট করে নিয়ে গেছে। ওই জমি সম্পর্কে জানা গেছে, ১৯৫০ সাল থেকে বাউফলের কেশবপুরের জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহের এস্টেটে শংকর ধুপির পিতামহ এবং পিতা চাকরি করতেন। ১৯৬০ সালে সতীশ চন্দ্র গুহ দেশ ত্যাগ করার প্রাক্কালে শংকর ধুপির পিতাসহ ও তার পরিবারের লোকজনকে ৪ একর ৯০ শতাংশ জমি ভোগ করার অনুমতি দিয়ে যান। সতীশ চন্দ্র গুহ ও তার পরিবার দেশ ত্যাগ করার পর বর্গাচাষী হিসেবে জমি দাবি করে এলাকার মনতাজ উদ্দিন মুন্সি ১৯৬১ সালে বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করলে ১৯৬২ সালে সে মামলা খারিজ হয়ে যায়। এরপর মনতাজ মুন্সী ১৯৬৩ সালে হাইকোর্টে ১২৬ নং মামলা করে ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল তার পক্ষে রায় পায়। পরে ১৯৮০ সালে শংকর ধুপিকে ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। ওই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শংকর ধুপি ১৯৮০ সালে আপীল করলে আদালত উচ্ছেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আবার মনতাজ মুন্সী ১৯৯৪ সালে ওই নিষেধাজ্ঞার ওপর জজ কোর্টে আপীল করে তার পক্ষে রায় পায়। এরপর শংকর ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টে আপীল করলে হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের রায় বাতিল করে শংকর ধুপির পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মনতাজ মুন্সির ওয়ারিশগণ ২০০৬ সালে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করলে সে আপীলের এখনও কোন নিষ্পত্তি হয়নি। এদিকে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এক অধ্যাদেশ বলে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত সকল প্রকার রায় ও ডিক্রি বাতিল করেন। ওই আদেশ বলেও শংকর ধুপি ওই জমির প্রকৃত মালিক বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন। ওই জমিজমা ও ভিটাবাড়ি নিয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক হলেও মনতাজ মুন্সীর ওয়ারিশগণ সালিশী না মেনে জোর করে জমি চাষ করে এবং ধান কেটে নিয়ে গেছে। এছাড়া বাড়ির গাছ কেটে ও পুকুরের মাছ জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে মনতাজ মুন্সীর ওয়ারিশগণ খুব প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোন কিছুই আমলে নিচ্ছে না। তারা সর্বদাই শংকর ধুপিকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকার পেতে থানায় গেলে সেখানেও শংকর ধুপিকে পুলিশের গালমন্দ শুনতে হচ্ছে। শংকর ধুপি বলেন, মনতাজ উদ্দিন ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল যে রায় পেয়েছেন সালিশদার কিংবা তদন্তকারী দল সবসময়ই সে রায়ের পক্ষে কথা বলে। তারা প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশের কথা এড়িয়ে আমাকে হয়রানি করছে। এদিকে মনতাজ মুন্সীর ওয়ারিশগণ কর্তৃক দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় তদন্তে গিয়ে বাউফল থানার সাবেক এসআই লুৎফর রহমান অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শংকর ধুপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দিয়ে গেছেন। জানা গেছে, কোন সালিশদার কিংবা কোন তদন্তকারী দলই প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ আমলে নিচ্ছেন না। প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। মনতাজ উদ্দিন মুন্সীর ওয়ারিশগণের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, শংকর ধুপিকে তাঁরা থাকতে জায়গা দিয়েছেন। ওই জমির মালিক তাঁরাই।
×