ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক স্থিতি থাকলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজনৈতিক স্থিতি থাকলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি দেশই যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় যাত্রা শুরু করে। সেই পরিস্থিতি থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশটির কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় শেখার আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বাংলাদেশেও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের উদ্যোগে ‘কোরিয়ার উন্নয়ন অভিজ্ঞতা : বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপিত শর্ত শিথিলের আহ্বান জানান। সংলাপে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি উন-ইয়ং, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭৩ সালে আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৭৮ শতাংশ। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় আমাদের জমির ওপর নজর দিতে হয়েছিল। তাই সে সময় শিল্পায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমানে কৃষির অবদান অনেক কমেছে। এখন জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৭ শতাংশ। তিনি বলেন, দেশে এখন জনসংখ্যা বাড়ছে। বসবাসের জন্য জমি কমছে। তাই আমাদের কারখানার ওপর নজর দিতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৎকালীন ব্রিটিশ জেনারেল ম্যাক আর্থার ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে উঠতে কোরিয়ার কমপক্ষে একশ’ বছর সময় লাগবে। কিন্তু তারা মাত্র ৫০ বছরে তা কাটিয়ে উঠেছে। সুতরাং তাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। মন্ত্রী বলেন, কোরিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা মাত্র ৫০ বছরে তাদের জাতীয় আয় চারশ গুণ এবং জিডিপি সাতশ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তারা মাথাপিছু আয় ২০ হাজার ডলার এবং বর্তমান জিডিপি ৮শ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়তই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। যেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি উন-ইয়ং বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বড় উন্নয়ন অংশীদার। দুই দেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিরাজ করছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়ানো সম্ভব। এতে উভয় দেশই উপকৃত হবে। রাষ্ট্রদূত লি আন ইয়াং বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) এর মাধ্যমে কাজ করছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প খাতে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করবে। তিনি আরো বলেন, কোরিয়ান বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সিএসআর কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াঙ্গুন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কি হাক সান বাংলাদেশে কোরিয়ান ইপিজেড এর নানা অসুবিধার চিত্র তুলে ধরে সেগুলো দূর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এ সময় কোরিয়ান জায়ান্ট স্যামসাং কোম্পানিকে ভিয়েতনাম কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ যদি ভিয়েতনামের মতো বিনিয়োগের সুযোগ দেয় তবে দেশটির অর্থনীতির জন্য তা খুবই লাভজনক হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে দুই পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন, এমসিসিআইয়ের সভাপতি রোকেয়া আফজাল হোসেন, সিএসআর সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক সোবহান প্রমুখ।
×