ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শতাধিক হাঁস-মুরগি ও ছাগলের মৃত্যু ॥ ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে

নীলফামারীর গ্রামে আগুনে পুড়ে ২শ’ ৪৬ ঘর ও আসবাব ছাই

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

নীলফামারীর গ্রামে আগুনে পুড়ে ২শ’ ৪৬ ঘর ও আসবাব ছাই

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে ॥ পৃথক দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতে নীলফামারীতে ৯৩ পরিবারের ২৪৬টি ঘর এবং আসবাবপত্র, ধানচাল, নগদ অর্থ পুড়ে ছাই হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিন শতাধিক হাঁস-মুরগি এবং সাতটি ছাগল মারা গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সাতারুপাড়ায় ৮৫ পরিবারের ২২৫টি ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম সুতা ভিজাপাড়া গ্রামের আট সংখ্যালঘু পরিবারের ২১টি বসতঘর রয়েছে। ঘটনা দুটির একটি রান্নাঘরের চুলা ও অপরটি বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সূত্রপাত বলে প্রচার করা হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা বলছে এটি রহস্যজনক। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সাতারুপাড়ায় গেলে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রামটির চারদিকে শুধুই আহাজারি। পরনের কাপড় ছাড়া কোন কিছুই নেই। আগুনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে। কনকনে শীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিদ্রাহীন রাত পার করেন। সহায়-সম্বল হারিয়ে পরিবারগুলো এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ কেমন আগুন। রান্নাঘর থেকে আগুন লাগলে সেটা বোঝা যায়। কিন্তু কোন বাতাস ছিল না। ফুলকির মতো উদয় হয়ে অতিদ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সোনারায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান শাহ মান্নু জানান, সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে হঠাৎ করে সাতারুপাড়া গ্রামের পূর্ব-উত্তর কোণের ইলিয়াস হোসেনের বাড়ির কাছ থেকে ফুলকির মতো আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কেউ কেউ বলছেন, সোলেমানের বাড়ির পল্লী বিদ্যুতের পিলারে ঝুলন্ত একটি বৈদ্যুতিক মিটার বিস্ফোরণ ঘটে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু এসবের কোন সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। আলো বাতাসহীন এমন আগুন নিমিষের মধ্যে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা এমনভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল যে, স্থানীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, মোবাইলে ফায়ার সার্ভিসকে আগুনের বিষয়টি জানানো হয়। নীলফামারী ও সৈয়দপুর থেকে দুটি ইউনিট এসে রাত সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি ও র‌্যাব-১৩ নীলফামারী ক্যাম্পের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পাঁচ কেজি করে চাল ও এক কেজি করে আলু দেয়া হয়। অপরদিকে বিকেলে সরকারী সহযোগিতায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কেজি করে চাল, দুটি করে কম্বল ও নগদ ৮০০ টাকা করে দেয়া হয়। নীলফামারী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার এনামুল হক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খোঁজা হচ্ছে। এদিকে একই দিন রাত ৮টার দিকে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম সুতা ভিজাপাড়া গ্রামে অগ্নিকা-ে আট সংখ্যালঘু পরিবারের ২১ ঘর, আসবাপত্র, ধান-চাল, আলু, নগদ অর্থ পুড়ে ছাই হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। একে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড বলে অভিযোগ করে অনেকেই জানান, কার বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত, তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ বলেন মানিক রায়ের বাড়ি থেকে, কেউ বলেন অতুল চন্দ্র রায়ের বাড়ির রান্নাঘরের বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হতে আগুনের সূত্রপাত হয়। কিন্তু দুই পরিবার থেকেই তা অস্বীকার করা হয়। উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হলেও গাড়ি বরাদ্দ নেই। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান সরকারীভাবে মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে একটি করে কম্বল, ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ এক হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। পুলিশের ত্রাণ বিতরণ ॥ সোনারায় ইউনিয়নের সাতারুপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ৮৫ পরিবারের ২২৫ ঘর ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনায় জেলা পুলিশ প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার জোবায়েদুর রহমান প্রতিটি পরিবারের মাঝে ২০ কেজি চাল, তিন কেজি মসুরের ডাল, এক কেজি সয়াবিন তেল, এক কেজি লবণ ও দুটি করে সাবান দিয়েছেন।
×