ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্মহত্যা করছে যৌনদাসীরা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

আত্মহত্যা করছে যৌনদাসীরা

জিহাদী দল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে যৌনদাসী হতে বাধ্য হওয়া ইরাকের ইয়াজিদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ও কিশোরীরা আত্মহত্যা করেছে বা তা করার চেষ্টা করেছে। মঙ্গলবার এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ কথা জানায়। আইএস জঙ্গীরা গত জুন মাস থেকে ইরাক ও প্রতিবেশী সিরিয়ার বিরাট অংশ দখল করে রয়েছে এবং সেখানে খিলাফত রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে। খবর এএফপি, টাইম ও ডেইলি মেইলের। আইএস হাজার হাজার নারী ও কিশোরীকে অপহরণ করে তাদের খোলাবাজারে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করছে। তাদের প্রত্যেককে একেবারে ১৬ পাউন্ডের মতো নামমাত্র মূল্যেও বিক্রি করা হচ্ছে। মঙ্গলবার এ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। এ্যামনেস্টির এক বেদনাদায়ক রিপোর্টে নারী বন্দীদের প্রতি আইএস যোদ্ধাদের নির্মম আচরণের সত্যিকারের বিবরণ প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে। তাদেরকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যৌন ও গৃহদাসীতে পরিণত করা হয়। আইএসের কোন যৌনদাসী হতে হলে কারও যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ১২ বছরের বালিকাদেরও তাদের মায়েদের সঙ্গে চুল ধরে টেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে তুলে বাছাই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের বয়স, শিক্ষা ও বৈবাহিক অবস্থা অনুযায়ী আলাদা করা হয়। তাদের বাড়িঘর থেকে অপহরণ করার পর সর্বোচ্চ ডাককারীর কাছে বিশেষত আইএস কমান্ডারদের কাছে খেলার সামগ্রীর মতো বিক্রি করা হয়, অথবা জিহাদের সেবা করার পুরস্কারস্বরূপ ‘সবচেয়ে সাহসী’ যোদ্ধাদের উপহার দেয়া হয়। তারপর তাদের ভাগ্যে কি ঘটে, তা নতুন মালিকদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। নতুন মালিকরা তাদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ চালাতে বা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এগুলো ব্যক্তিগত নির্মমতার বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত নয় বরং শরিয়া আইনের পাশবিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে পাইকারিভাবে দাসীতে পরিণত করার এক স্বাভাবিক রীতি। বন্দীদের প্রতি আইএসের বর্বরতার লোমহর্ষক বিবরণ সামান্যসংখ্যক কিশোরীর সাহসের কারণে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তারা তাদের আটককারীদের হাত থেকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে এসে তাদের জীবনের ঘটনাগুলো বর্ণনা করে। আইএস উত্তর ইরাকে ইয়জিদি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু তাদের হামলার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করে। মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি একে জাতিগত নির্মূলকরণ অভিযান বলে অভিহিত করেছে। এ হামলায় বেসামরিক লোকজনকে হত্যা এবং অন্যদের দাসে পরিণত করা হয়। কোন কোন বন্দী এ দাসত্বকে মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ বলে অভিহিত করে। ১৯ বছর বয়সের জিলান তাকে ধর্ষণ করা হবে বলে ভয় পেয়ে আত্মহত্যা করে। তার ভাইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এ্যামনেস্টি একথা বলে। জিলানের সঙ্গে আটক হয়েছিল কিন্তু পরে পালিয়ে যেতে পেরেছিল এমন এক কিশোরী ঐ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। কিশোরী বলেছে, একদিন আমাদের নৃত্যের পোশাক বলে মনে হয়েছিল এমন কাপড়-চোপড় দিয়ে গোসল করে সেগুলো পরতে বলা হয়। জিলান বাথরুমে আত্মহত্যা করে। সে তার কবজি কাটে এবং নিজেকে ফাঁসিতে ঝোলায়। সে দেখতে খুবই সুন্দরী ছিল। আমার মনে হয়, সে জানত এক ব্যক্তি তাকে নিয়ে যাবে এবং এজন্যই সে আত্মহত্যা করে। আরেক সাবেক বন্দী মানবাধিকার গোষ্ঠীকে বলে যে, সে ও তার বোন জোরপূর্বক বিবাহের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের সে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। আইএস দীর্ঘদিন ধরে এর যোদ্ধাদের সেবায় যৌনদাসীদের কাজে লাগানোর কথা অস্বীকার করে। কিন্তু অক্টোবরে সন্ত্রাসী দলটি এক প্রচারপত্রে উল্লেখ করে যে, ইয়াজিদিরা বিধর্মী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়ায় তাদের বন্দী করে দাসে পরিণত করা যুক্তিসঙ্গত। এতে বলা হয়, কাফেরদের (অবিশ্বাসী) পরিবারগুলোকে দাসে পরিণত করা এবং তাদের নারীদের রক্ষিতা হিসেবে নিয়ে নেয়া শরিয়ার এক দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত দিক। চলতি মাসের প্রথম দিকে আইএস বন্দী ও দাসদের আটক করা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরপত্র বিতরণ করে। এতে বলা হয়, যৌবনপ্রাপ্ত হয়নি এমন যৌনদাসীর সঙ্গেও দৈহিক মিলন অনুমোদনযোগ্য, যদি সে এ কাজের উপযুক্ত হয়। মানবাধিকার কর্মীরা জানান, আইএস গত পাঁচ মাসে পায় ২৫০০ কিশোরী ও নারীকে যৌনদাসী হিসেবে আটক করেছে। পায় ২০০০ ইয়াজিদি পুরুষও নিখোঁজ রয়েছে। তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
×