ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় রেগুলেটরি বডির বৈঠক শুরু

সার্ক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় ‘জ্বালানি বলয়’ গড়ে তোলার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

সার্ক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় ‘জ্বালানি বলয়’ গড়ে তোলার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণ, বিদ্যুত ও জ্বালানির ব্যবহার সম্প্রসারণে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি বডি) গঠন করার লক্ষ্যে ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনের বৈঠক। রবিবার ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে ‘সার্ক এনার্জি রেগুলেটরস’দের প্রথম বৈঠক শুরু হয়। আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই সংস্থা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছে আয়োজকরা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যাপকভবে আলোচিত হচ্ছে। কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বিদ্যুত চুক্তি হয়েছে। এতে এই অঞ্চলের পানির শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ভারত-নেপাল ও ভুটানে ব্যাপকভাবে জল বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে যা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সার্কের সঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করেছে। দুদিনের এ বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘সার্ক অঞ্চলে সুষম উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে ‘জ্বালানি বলয়’ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। হিমালয় অঞ্চলে জলবিদ্যুতের যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা ব্যবহার করে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। এ জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও ক্রসবর্ডার বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ অঞ্চলে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগও বেড়েছে। আমরা পরিবেশসম্মত জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করতে চাই। এ জন্য হিমালয়ের জলবিদ্যুত ব্যবহারে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব আবুবকর সিদ্দিক বলেন, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানি বিষয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। আশা করছি এ দুটি দেশ থেকে দ্রুতই বিদ্যুত আমদানি বিষয়ে সফল হওয়া যাবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব আবুবকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সারাদিনই বিভিন্ন সেশনে জ্বালানির নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন কিভাবে একটি কমন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা যায়। সার্ক সচিবালয় বলছে সদস্য দেশগুলোর এনার্জি রেগুলেটরসদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান প্রদান, নীতি ও আইনের বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক, আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা গঠন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। দুদিনের বৈঠকের পর আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে দুদিনের বৈঠকের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশ ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। আরো ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া আগামী বছর ডিসেম্বরে ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে। ভারত দেশটির এক অঞ্চলের জলবিদ্যুত অন্য অঞ্চলে নিতে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশও ভারতের এই আগ্রহে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। দুই দেশের বিদ্যুত জ্বালানি খাতের উন্নয়নে গঠিত সচিব কমিটিতে বিষয়গুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারত-নেপাল-ভুটান ও বাংলাদেশ যৌথভাবে জল বিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে।
×