ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুশ-ইইউ সংঘাত দীর্ঘ হবে!

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

রুশ-ইইউ সংঘাত দীর্ঘ হবে!

রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেন থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে অস্বীকার করলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতারা সম্মিলিত শক্তি দিয়ে মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতে যেতে প্রস্তুত। তারা রাশিয়ার প্রতি বৃহস্পতিবার এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। আর পুতিন স্বীকারে বাধ্য করতে পারবে না বলে সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর দেশের অস্থিরতার জন্য পাশ্চাত্যকে দোষারোপ করে বলেন, তারা মস্কোর প্রভাব সীমিত করার এক দীর্ঘকালীন চেষ্টার অংশ হিসেবে তাঁর দেশের ওপর চাপপ্রয়োগ করছে। তিনিও পাশ্চাত্যের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সংঘাত চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মনে হয়, যদিও তিনি পূর্ব ইউক্রেনে শান্তি আনার জন্য কিছুটা অপোসমূলক মনোভাব ব্যক্ত করেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ইয়াহু নিউজের। ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার ইইউর সংক্ষিপ্ত শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, আমাদের অবশ্যই আত্মরক্ষামূলক অবস্থানের বাইরে যেতে হবে। ইউরোপীয় হিসেবে আমাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার এবং আমাদের নিজস্ব শক্তি অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে রাশিয়ার প্রতি এক দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপীয় কৌশল ছাড়া ইউক্রেন সম্পর্কে কোন দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি আমরা খুঁজে পেতে পারি না। সম্মেলনে ইইউ নেতারা গত বছরের মতো পুতিনের সামনে শাস্তি দানের হুমকি এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক বাণিজ্যের পুরস্কার উভয়ই উন্মুক্ত রেখে যাবেন বলে স্পষ্ট করে দেন। তাঁরা ইউক্রেনকে সোভিয়েতপরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার সাধনের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে যেতে সম্মত হন। বৃহস্পতিবার ইতোপূর্বে সম্মত কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করার পর তাঁরা মস্কোর বিরুদ্ধে আর কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের মতো তাঁরাও স্পষ্ট করে দেন যে, পুতিন সেপ্টেম্বরে মিনস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করছেন বলে তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছলে ওই সব নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, যদি রাশিয়া এর আচরণ বদলায়, তা হলে দরজা সব সময়ই খোলা রয়েছে। যদি মস্কো রুশ সৈন্যদের ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং মিনস্ক চুক্তির সব শর্ত মান্য করে, তাহলে নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়া হতে পারে। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেন, যদি নিষেধাজ্ঞার কারণগুলো বদলে যায় তাহলেই কেবল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে। তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তা সফল হয়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বৃহস্পতিবার বর্ষপূর্তি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশকে এক শৃঙ্খলিত ভল্লুকে পরিণত হওয়া এড়াবে বলে নিজের সার্বভৌমত্বকে সক্রিয়ভাবে রক্ষা করতে হবে। পাশ্চাত্য রুশ ভল্লুককে খড়কুটো ভরা এক জাদুঘরের প্রাণীতে পরিণত করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যদি ভল্লুক শূকর শিকার বন্ধ করে দিয়ে ফল কুড়াতে এবং মধু খেতে শুরু করে, তাহলে কেউ একে শিকলবদ্ধ করতে সব সময়ই চেষ্টা করবে। যখনই সে শিকলবদ্ধ হয়ে পড়বে, তখন তারা তার দাঁত ও নখ উপড়ে ফেলবে। তিনি রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেন সংঘাতে মস্কোর গৃহীত নীতি সমর্থন করেন। তিনি মস্কোর এ নীতির পাল্টা-ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পাশ্চাত্যের কড়া সমালোচনা করেন। রুশ সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনে অবস্থান করছে কিনাÑ এ প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। কিন্তু তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর প্রশংসা করেন। ইউক্রেনীয় নেতা শান্তির পক্ষে বলে পুতিন মন্তব্য করেন। তবে তিনি বলেন, ইউক্রেনের অন্যান্য কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পুতিন মস্কোয় সমবেত সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দেশ ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছে। ইউক্রেনে নিহত রুশরা তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর সদস্য- এ কথা তিনি অস্বীকার করেন। পশ্চিমা শক্তিগুলো ইউক্রেনের সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করার জন্য সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর দায়ে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে থাকে।
×