ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘জানোয়ারের মতো কথা বলছে ॥ দেশবাসী জানে জানোয়ারকে শিক্ষা দিতে’

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

‘জানোয়ারের মতো কথা বলছে ॥ দেশবাসী জানে জানোয়ারকে শিক্ষা দিতে’

খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ তারেকের জিভ সামলান বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানের নাম উল্লেখ না করে বলেন, পড়াশোনা শিখে মানুষ হয়নি বলেই জানোয়ারের মতো কথা বলছে। মানুষরূপী এসব অশিক্ষিত জানোয়ারকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা দেশের মানুষ জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেয়া উচিত এবং মানুষ তা দেবেও। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বলবÑআপনার কুপুত্রকে (তারেক রহমান) জিভ সামলে কথা বলতে বলুন। মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সে যেসব জঘন্য কথা বলছে তা বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষ তার এসব মিথ্যাচার মেনে নেবে না, বরদাস্তও করা হবে না। বেগম আইভি রহমানসহ সে (তারেক রহমান) অনেকের রক্ত নিয়েছে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের যেভাবে বিচার হচ্ছে, তেমনিভাবে ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলার বিচারও বাংলাদেশের মাটিতে হবেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিম দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ নিয়ে ছেলেদের কী শিক্ষা দিয়েছেন? কী পাস করেছে সে? জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে ছেলেকে মানুষ করতে পারেননি, চোর বানাতে পেরেছেন। ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবনে বসে সে (তারেক রহমান) মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, প্যারালাল সরকার গঠন করে সরকারী কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির তালিকা বানিয়েছে। হাওয়া ভবনের পাওনা না দিয়ে কেউ ব্যবস্যা করতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই এসে ছেলেদের দুর্নীতি ও পাচারকৃত অর্থের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে, সিঙ্গাপুরের আদালতে ছেলেদের দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতির দায়ে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে আজ বড় বড় কথা বলছে। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন কটূক্তি করছে। তার এ ধরনের কথাবার্তা আর মেনে নেয়া হবে না। বুধবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ উল্লেখ করে সম্প্রতি তারেক রহমানের প্রদত্ত বক্তব্যে শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, আলোচক সকল নেতাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই মুহুর্মুহ সেøাগান দিয়ে নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার দাবিতে পুরো মিলনায়তন প্রকম্পিত করে রাখে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুবউল আলম হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডাঃ দীপু মনি, আহমদ হোসেন, কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তারেক রহমানের বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে বসে যে জঘন্য ও নোংরা কথা বলে বেড়াচ্ছে তার নামটি নিতেও ঘৃণা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা আগে তার বাবা ও মা করেছে। তিনি বলেন, সত্যিকারের লেখাপড়া শিখলে, দেশের ইতিহাস পড়লে এসব ঘৃণ্য কথা বলতে পারত না। আসলে মানুষ হয়নি বলেই সে জানোয়ারের মতো কথা বলছে। একাত্তরে পাক হানাদার ইয়াহিয়ার কথার প্রতিধ্বনীই শোনা যাচ্ছে তার মুখ থেকে। তিনি বলেন, যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, সেভাবেই ২১ আগস্ট হত্যাকা-েরও বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না। খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বলেই দেশকে পিছিয়ে দিতে চান। পরাজিত শক্তির দোসর হয়ে সবসময় উনি বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চান। পাকি প্রেম উনি কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান, পারবেন না। আপনি (খালেদা জিয়া) যদি এতই সাধু হন, তবে আদালতে যেতে ভয় পান কেন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অপরাধ করেছেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় আদালতে হাজিরা দেন না। এতিমের টাকা মেরে খেয়ে কেন এখন আদালত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন? আদালতে মামলা চলাকালে তাঁর আইনজীবীরা আদালতকে অসম্মান করেন, গালাগালি করেন। বিশ্বের কোন সভ্য দেশেই এ ধরনের অসভ্য কাজ কেউ করে না। আসলে আপনি জানেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন, বিচারে তা প্রমাণ হবে। এজন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতিমের টাকা মেরে খেয়ে পালিয়ে বেড়ায়ে এখন অন্যকে দোষ দিচ্ছেন। অন্যকে দোষ দেয়ার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। কৌতুকছলে তিনি বলেন, আয়নায় হয়ত দেখবেন তাঁর সবই নকল। জিয়া পরিবারকে ‘খুনী পরিবার’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জেনারেল জিয়া যেভাবে খুনী মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন, ঠিক তেমনিভাবেই তাঁর খুনী পরিবারের স্ত্রী-পুত্ররা আজও হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া ও তার পুত্ররা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। আর তার দল তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চায়। আমার প্রশ্ন, জিয়া মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতার ঘোষক হলে কিভাবে স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে? কিভাবে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী ও একরাতে ১১০ জন হত্যাকারী আবদুল আলিমকে মন্ত্রী বানায়? স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসায়? জিয়া স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের পুরস্কৃত করে, যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনর্বাসিত এবং জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়? সে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা হলে একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে এত দহরম-মহরম কেন ছিল? তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া আলবদরপ্রধান নিজামীকে মন্ত্রী বানিয়ে তার গাড়িতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল। জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেছে, আর খালেদা জিয়া দুই আত্মস্বীকৃত খুনীকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি বানিয়ে সংসদে বসিয়েছেন। স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে জিয়া-খালেদা জিয়ারা এসব অপকর্ম করতে পারত না। তিনি বলেন, খুনী, রাজাকার-আলবদর, গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন এই জিয়া-খালেদারা। শুধু তাই নয়, একাত্তরে হানাদাররা যেভাবে বাঙালীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ারা ঠিক একই কায়দায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। শত শত মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যে দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না তা পাকি জেনারেল আসলাম বেগের চিঠিই তার বড় প্রমাণ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াকে লেখা আসলাম বেগের চিঠিতেই জিয়াউর রহমানের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী-পুত্ররা যে সুখেই রয়েছে সে কথা উল্লেখ ছিল। পাকিদের প্রতি তাঁর এতই প্রেম যে, হানাদার জানজুয়ার মৃত্যুর পর সকল প্রটোকল ভেঙ্গে খালেদা জিয়া শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। পাকিদের সঙ্গে তার কত গভীর সম্পর্ক এটিও তার প্রমাণ। তিনি বলেন, আসলে খালেদা জিয়া আইন-কানুন, আদালত কিছুই মানেন না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতিই যার ছিল একমাত্র নীতি, সেই খালেদা জিয়া আমাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন! তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমানের ভাঙ্গা স্যুটকেস-ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে জিয়া পরিবারের এত অর্থ-সম্পদ এলো কোথা থেকে? নিজের ছেলেকে শিক্ষা না দিয়ে দুর্নীতিবাজ বানিয়েছেন। এখন উনি আমার ছেলেকে নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর দুটো স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছে। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছে। আমি ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। বর্তমানে আমার ছেলে অনারারি (অবৈতনিক) উপদেষ্টা হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক আগে থেকেই সে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হয়ত বিএনপি নেত্রী অনারারি শব্দের অর্থ বোঝেন না বলেই বলতে পেরেছেন, শত শত ডলার বেতনে আমার ছেলে কাজ করছে। আসলে উনি (খালেদা জিয়া) তো অর্থ-সম্পদ ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। আসলে পুরো পরিবারটাই মিথ্যা বলায় চ্যাম্পিয়ন। আমির হোসেন আমু বলেন, আসলে বিএনপির পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই পাগলের প্রলাপ বকছে। তবে বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করার দুঃসাহস দেখালে সেই পাগলের শাস্তি পেতেই হবে। এরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, আর কোনদিন উঠতে পারবে না। তোফায়েল আহমেদ বলেন, লন্ডনে বসে মিথ্যাচারকারী এক উন্মাদের বক্তব্যের জবাব দিতেও আমার ঘৃণা হয়। বাংলাদেশ আজ পাকিস্তান থেকে সব সূচকে এগিয়ে, কিছু ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা পৃথিবীর কোন শক্তিই রুখতে পারবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খালেদা জিয়াকে শেষবারের মতো সাবধান করে দিয়ে বলেন, এখনও সময় আছে ছেলেকে সংযত করুন। সে সকল সীমা অতিক্রম করেছে। ঘসেটি বেগমের পোলা লন্ডনে বসে পাগলের প্রলাপ বকছে। এখনই এদের থামাতে যা করার তাই করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বিএনপিকে ‘বাংলাদেশ নালিশ পার্টি’ আখ্যায়িত করে বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানাতে চান, কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁকে ভুলে যেতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে কোরবানি দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। তাই যত্রতত্র নালিশ করে কোন লাভ হবে না। জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকারের গডফাদার’ উল্লেখ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাত করতেই পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে জিয়াউর রহমান কাজ করেছে। পাকি জেনারেল আসলাম বেগের চিঠিই তার বড় প্রমাণ।
×