ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবন বাঁচান

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দরবন বাঁচান

গত সপ্তাহে শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির পর সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা যেন সত্যে পরিণত হতে চলেছে। তেলসিক্ত বিপন্ন মাছরাঙার ছবি প্রকাশ করেছে এএফপি। পশুর নদীর মোহনায় এখন আর ইরাবতী ডলফিনের দেখা মিলছে না। এমনকি ভাটার সময় কাঁকড়া ও যেসব জলজপ্রাণী খালপাড়ে দেখা যেত, তাও চোখে পড়ছে। ছড়িয়ে পড়া সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েলের প্রভাবে খালপাড়ে অঙ্কুরিত গাছগুলোর শীর্ণদশার ছবি এসেছে জনকণ্ঠে। তেল তুলে ফেলা, তেলের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সব প্রক্রিয়া কাজে লাগানোর পরও সুন্দরবনের মাথার ওপর বিপদের কালো মেঘ দূরীভূত হচ্ছে না। সুন্দরবনের শ্বাসমূলে লেপ্টে আছে তেলের আস্তর। ইতোমধ্যে তেল অপসারণ কার্যক্রম জোরদার করা এবং শত শত মানুষ নৌকা নিয়ে ম্যানুয়ালি ভাসমান তেল উঠিয়ে ফেলার পরও ছড়িয়ে পড়া তেলের ব্যাপকতা যেন কোনক্রমেই কমছে না। নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক যান চালনার ঝুঁকিপূর্ণ নির্দেশনাটি যে আত্মঘাতী হয়েছে সেটা এখন প্রমাণিত। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কারা কীভাবে দিয়েছিল সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমত দিয়েছে, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে নৌপথ বন্ধ করা যাবে না। এ অভিমতের ভিন্ন অবস্থান নেয় পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই দাবি পরিবেশ বিশেষজ্ঞদেরও। মন্ত্রীরা সব জান্তা নন। কেউই সবজান্তা হতে পারেন না। যদি হতেন তাহলে ‘বিশেষজ্ঞ’ বলে কিছু থাকত না। সাদা চোখে সুন্দরবনের ক্ষতি যেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে সেখানে নৌপরিবহনমন্ত্রী বলে বসলেন, তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। এখন আবার একই মন্ত্রণালয় থেকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই তেলের জন্য সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ ও পশু-পাখির জীবন বিপন্ন হবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসেরও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। দুটো বিষয় স্মরণযোগ্য। এক, ১৯৯৪ সালে মংলা বন্দরের কাছে পশুর নদীতে তেলবাহী বিদেশী জাহাজ ডুবে ১৯৩ টন তেল ছড়িয়ে পড়লেও ওই সময় ভাটা থাকায় তেলের বিরাট অংশই ভেসে নেমে যায় বঙ্গোপসাগরে। এবার তেমনটি ঘটেনি। দ্বিতীয়ত সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌচলাচলের জন্য মাত্র তিন মাসের অনুমতি দেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। অথচ বিগত চার বছর ধরেই নৌপথটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এটা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই যে, ফার্নেস তেলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ পরিবহনে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে, দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণ সম্ভব হয়নি। যেটুকু ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। আরও ক্ষতি এড়াতে সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে জরুরীভিত্তিতে তেল অপসারণ করা দরকার। সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয়। পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমলে নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক নৌচলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা উচিত। যে কোন মূল্যে সুন্দরবন বাঁচাতে হবে।
×