ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব

কৃষকের ব্যাংক হিসাব ৯৭ লাখ ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

কৃষকের ব্যাংক হিসাব ৯৭ লাখ ছাড়িয়েছে

রহিম শেখ ॥ রাষ্ট্রীয় ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর বিশেষ উদ্যোগে ১০ টাকা দিয়ে কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৭২ কৃষক ব্যাংক হিসাব খুলতে সক্ষম হয়েছেন। অক্টোবর মাসে নতুন করে এক হাজার ৭০০টি হিসাব খোলা হয়েছে। কৃষকের হিসাবসহ ১০ এবং ১০০ টাকার মোট হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ১৬৩টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও যদি এ উদ্যোগে সাড়া দেয় তাহলে হিসাব খোলার এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কোন সার্ভিস চার্জ ছাড়াই এ হিসাব খোলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ও বিশেষায়িত ৭ ব্যাংকের পুঞ্জীভূত হিসাব সংখ্যা ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৭২টি। আগের মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ২০ হাজার ৪১২টি। তবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এ পর্যন্ত ১০ টাকায় একটি হিসাবও খোলেনি। আর অক্টোবর মাসে রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নতুন করে কোন হিসাব খোলেনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনতা ব্যাংক অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে। এ ব্যাংকে মোট ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬টি হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে নতুন খোলা হয়েছে ৩৬৩টি। এর পরে সোনালী ব্যাংকে অক্টোবর মাসে খোলা হয়েছে ১৯০টি হিসাব। ব্যাংকটিতে পুঞ্জীভূত হিসাবের সংখ্যা ২২ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৯টি। তবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ১০ টাকায় খোলা এ্যাকাউন্টের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেই সঙ্গে সচল হিসাবের সংখ্যাও বেশি। এ ব্যাংকের পুঞ্জীভূত হিসাবের সংখ্যা ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৬টি। রূপালী ব্যাংকের ৫ লাখ ৩ হাজার ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের ৬৯টি হিসাব নতুন খুলেছে। এ ব্যাংকের মোট হিসাবের সংখ্যা ৮০১টি। একইভাবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৩টি হিসাব রয়েছে। জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রথম কৃষকদের জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে হিসাব খুলতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের ফটোকপি এবং দুই কপি ছবি জমা দিয়ে হিসাব খুলতে পারছেন কৃষক। এ ধরনের হিসাব পরিচালনায় ব্যাংক কোন চার্জ আরোপ করতে পারবে না। এসব হিসাব থেকে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া এবং কৃষকের সঞ্চয়ের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অধ্যয়নরত কৃষকের ছেলেমেয়ের কাছে সহজে টাকা পাঠানো এবং বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনরা সহজে টাকা পাঠাতে পারেন ব্যাংক হিসাবে। সারাদেশে কৃষকের ব্যাংক হিসাব বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা, অতি দরিদ্র মহিলা, দুস্থ, ছিন্নমূল ও কর্মজীবী শিশু এমকি ভিক্ষুকরাও যাতে ১০ টাকায় এ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইভাবে স্কুল পর্যায়েও শিক্ষার্থীরাও যেন এ সুযোগ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ব্যবস্থাও করেছে। অন্যান্য এ্যাকাউন্টের মতো এসব এ্যাকাউন্টের জন্য ন্যূনতম কোন স্থিতি রাখার প্রয়োজন নেই। বাড়তি কোন চার্জও আরোপ নেই এসব ব্যাংক হিসাবে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করছেন, কৃষকসহ সমাজের অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসায় কৃষি উপকরণ ও ভাতার টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, কৃষকের হিসাবসহ ১০ এবং ১০০ টাকার মোট হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ১৬৩টি। এরমধ্যে কৃষকের নামে ১০ টাকার হিসাবের সংখ্যা ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৭২টি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগী ৩২ লাখ ২১ হাজার ৭৯টি, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ১ লাখ ৪৮হাজার ৬৭৩টি, ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতাদের নামে ১৬ হাজার ৯৯৩টি হিসাব খোলা হয়েছে। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যের নামে খোলা হয়েছে ১২ লাখ ১৭ হাজার ২৪৬টি হিসাব। এসব হিসাব সচল রাখতে গত মে এবং আগস্ট মাসে দুই দফায় ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে ৪৭টি তফসিলী ব্যাংকের মধ্যে ৪৫টিতে এসব হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও যদি এ উদ্যোগে সাড়া দেয় তাহলে হিসাব খোলার এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষকসহ সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবায় আনার জন্য এ সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। এ এ্যাকাউন্টের আওতায় কৃষকের কৃষি উপকরণ ও ভাতার টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এসেছে। এছাড়া একই এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে রেমিটেন্স উত্তোলন, কৃষিঋণ গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। এসব এ্যাকাউন্ট সচল রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। এমনকি কৃষকদের সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে অন্য এ্যাকাউন্টে সঞ্চয় করলে যে পরিমাণ লাভ দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি পরিমাণে লাভ দিতে বলা হয়েছে। এসব এ্যাকাউন্ট সচল থাকলে পরবর্তীতে তা কনভার্ট করে মোবাইল ব্যাংকিং-এ নিয়ে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে ১০ টাকায় এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে কৃষক ও প্রান্তিক মানুষকে দেশের সম্মানিত নাগরিকের মর্যাদাও দেয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। গবর্নর বলেন, ভারতের তুলনায় সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতে পাঁচ শতাংশ বেশি আস্থা ?অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, শুরুতে কিছু অস্থিশীলতা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রয়োজনে এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িতপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষকসহ ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বিনা মূল্যে আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সাহসী উদ্যোগ নেয়। এতে কৃষকরা ব্যাপক সাড়া দেন। তারা এখন দৈনন্দিন ব্যাংকিং কর্মকান্ড তারা এখন দৈনন্দিন ব্যাংকিং কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারছেন। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক সেবাভুক্তি সূচকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। এই সূচকে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কার পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
×