ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাট্যকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুই দশক

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

নাট্যকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুই দশক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা শিক্ষার দুই দশক পূর্তি হলো সম্প্রতি। বিভাগটির বেশ একটি গালভরা নাম রয়েছে- থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। এই বিভাগের কুড়িজন স্নাতকের পরিচালনায় টিএসসিতে মঞ্চস্থ হলো কুড়িটি নাটক। ১ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই নাট্যোৎসব। এটি ডিপার্টমেন্টের নবম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব। উৎসবের জন্যে দেশ-বিদেশের যেসব নাট্যকারের নাটক বেছে নেয়া হয় তাঁরা হলেন : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, মুনীর চৌধুরী, মনোজ মিত্র, মমতাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, বাদল সরকার, আন্তন চেখভ, অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গ, আইয়ান হেগি, হ্যারল্ড পিন্টার, ইউজিন ও নীল, ফ্রাঙ্কা রামে, মার্ক টোয়েন, ক্রিস্টোফার মার্লো এবং কলিন ক্যাম্পবেল ক্ল্যামেন্টস। উৎসবের সাজেই সেজেছিল টিএসসি প্রাঙ্গণ। প্রবেশমুখে নাটকের ছবি দিয়ে বিশালাকৃতির পৃথক প্রবেশদ্বার ছিল নজরকাড়া। টিএসসির ভেতরে সবুজ ঘাসের গালিচায়ও নাটকের মোটিফ শোভা পাচ্ছিল। টিকেটের দাম মাত্র ত্রিশ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে এসব নাটক উপভোগ করেছেন। আশির দশকের নাট্যচর্চার কথা অনেকেরই মনে পড়ে যাবে আমার মতোই। সে সময় ছিল নাট্যান্দোলনের স্বর্ণসময়। টিএসসি প্রতি সন্ধ্যায় সরগরম হয়ে উঠত নাট্যকর্মীদের পদচারণায়। একেকটি কক্ষে একেক নাট্যদলের নাটকের মহড়া চলত। সে সময় আবৃত্তি সংগঠনের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। এখন বিষয়টা উল্টো। টিএসসি মানে ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে নাটকের দল কম মহড়া দেয়। এখন অনেক নাট্যদলেরই নিজস্ব কার্যালয় আছে। তা না থাকলে মহড়ার জন্য আলাদা স্থান করে নিয়েছে তারা। তাই টিএসসিতে গ্রুপ থিয়েটারের কর্মকাণ্ড এবং এ সংক্রান্ত আড্ডা কমই হয়ে থাকে। এখন বরং প্রচুর আবৃত্তি সংগঠন। তারা নিয়মিত মহড়া দেয়। আশির শুরুতে নাট্যদল আরণ্যকের ‘গিনিপিগ’ নাটকের নির্দেশনা দিতে এসেছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। আমি তখন নবীন নাট্যকর্মী। তাঁর হাতে ধরে নাটকের এ্যাকশন শিখিয়ে দেয়ার স্মৃতি ভেসে উঠল চোখের সামনে। বর্তমানে তিনি থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। পিএইচডি করেছেন। নাট্যকলার দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকায় তিনি লিখেছেন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো যখন একটি আলোকশিখার উপরে ঘোষণা দেয়- শিক্ষাই আলো- তখন সেই আলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্যে শিক্ষক হিসেবে আমার এই সাহস রাখা প্রয়োজন, জ্যঁক র্যাঁসিয়ে যেমন দ্য ইগনোরেন্ট স্কুলমাস্টার গ্রন্থে দাবি করেন, শৃঙ্খল মোচন ব্যতিরেকে শিক্ষাদানের অর্থ বেকুব বানানো। থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ-এর শিক্ষাদান ফ্রেইরে এবং র্যাঁসিয়ের ভাবনা-ভুবনে দাঁড়িয়ে সকল সত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অভিজ্ঞতা ও অনুভব লাভের আত্মবাচক হাতিয়ারের মাধ্যমে বাঁচনের রূপরেখা খুব ক্ষুরধার করে ‘আঁকতে’ শেখাতে পারে। এই শিক্ষণের পর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের যে নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হতেই হবে, এমন কোনো শর্ত এই বিভাগের আরোপ করা উচিত নয় এবং গ্রুপ থিয়েটারেও তা আশা করা অনুচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী কিংবা বাংলা বিভাগে অধ্যয়নের পর যেমন ছাত্রছাত্রী সাহিত্যিক বনে যায় না, ঠিক তেমনি থিয়েটার ও পারফরম্যান্স অধ্যয়নের পর অপরিহার্য নয় তারা নাট্যচর্চার সঙ্গেই যুক্ত হবে।...
×