ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাদুঘরে ২২৩ নারী মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

জাদুঘরে ২২৩ নারী মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধা তো মুক্তিযোদ্ধাই; এখানে নারী ও পুরুষকে আলাদা করার কিছু নেই। আমি চাই, নারী মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেয়া হোক। সোমবার রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনও রয়ে গেছে যাদের কথা আমরা জানি না। এখনও সময় আছে গ্রামে গ্রামে, থানায় থানায়, জেলায় জেলায় ঘুরে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা একাডেমির সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা মাঠে নেমে যান, কাজ করেন, আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। সাজেদা চৌধুরী নিজেও যেন যুদ্ধের সেই দিনে ফিরে যান। তার সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অনেককে দেখে তিনি তখনকার অনেক ঘটনার বর্ণনা দেন। বিকেল তিনটায় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের এক মিলনমেলা পরিণত হয়েছিল। সবার চোখে-মুখে তখন ভেসে উঠেছিল ’৭১-এর সেই দিনগুলোর কথা। সবাই ফিরে গিয়েছিলেন সেই দিনে। কারা-কোথায় যুদ্ধ করেছিলেন। কীভাবে পাক হানাদার বাহিনী তাদের ওপর নির্যাতন করেছিল; সেই কথা মনে করে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মিরপুর ১১ নম্বর থেকে আসা সালেহা বেগম ’৭১-এর সেই স্মৃতি আওড়াতে আওড়াতে বলেন, সেদিন ছিল ৭ মে, পাকহানাদার বাহিনী আমাকে ও আমার গর্ভবতী বড় বোনকে উঠিয়ে নিয়ে যায় গোপালগঞ্জ কলেজে। সেখানে নেয়ার পর পাকি হানাদাররা আমার বোনকে রেখে আমাকে খুলনা নিয়ে যায়। গোয়ালমারী রেডিও সেন্টারে নিয়ে আমার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। টানা ২ মাস ওরা আমাকে আগুনে ছেঁকা দিয়েছে সারা শরীরে। এখনও সেই ক্ষতগুলো রয়ে গেছে। নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা দিতে দিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সালেহা। সেই সময়ের কথা মনে হলে এখনও তার গা শিউরে ওঠে। ২ মাস পর পাকহানাদার বাহিনী আমাকেসহ ৭ জনকে একটি ব্রিজের ওপর নিয়ে যায়। ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। তখন আমি ব্রিজ থেকে ছিটকে পড়ে যাই। সবাই ভাবে আমি মারা গেছি। তখন এক বৃদ্ধা আমাকে উদ্ধার করে। মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান,সাবেক এমএনএ ও মহিলা মু্িক্তযোদ্ধা সংসদের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম বলেন, ’৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মায়েরা-মেয়েরা সবাই যুদ্ধ করেছেন, তখনকার সময়ের সকল নারীই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ অনুষ্ঠানে সারা দেশের নারী মু্িক্তযোদ্ধার একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি কাজী রোজি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের মহাসচিব নাজমুল হাসান পাখি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব ক্যাপ্টেন (অব) আবুল কাশেম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহালানবীশ, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির উপদেষ্টা সেগুফতা নেসার, সাউথ এশিয়ান মিউজিক ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান শরীফ আশরাফউজ্জামান প্রমুখ। সংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
×