ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জিম্মিকারী শনাক্ত;###;সব জিম্মি উদ্ধার ॥ বন্দুকধারীসহ ২জন নিহত

সিডনির ক্যাফেতে জিম্মি সংকটের অবসান কমান্ডো অভিযানে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

সিডনির ক্যাফেতে জিম্মি সংকটের অবসান কমান্ডো অভিযানে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে লিন্ড ক্যাফে জিম্মি সঙ্কটের অবসান হয়েছে। কমান্ডো অভিযান চালিয়ে মুক্ত করা হয়েছে জিম্মিদের। অভিযানে দু’জন নিহত এবং তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। অভিযানে পুলিশের গুলিতে জিম্মিকারী ইরানী বংশোদ্ভূত হারুন মনিস নিহত হয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। সে অস্ট্রেলিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছিল। জিম্মি দুই ভারতীয় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত পৌনে তিনটায় পুলিশের অভিযানে জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে। এর আগে সোমবার সকালে সিডনির কেন্দ্রস্থলে মার্টিন প্লেসে লিন্ড ক্যাফের ভেতর এক বন্দুকধারী ক্যাফের কর্মচারী ও ক্রেতাদের জিম্মি করে। এ সময় ক্যাফেতে ১০ কর্মচারী এবং ৩০ ক্রেতা ছিল বলে জানায় লিন্ড কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে নাগরিকদের জিম্মি করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি এ্যাবোট। লিন্ড ক্যাফেতে জিম্মির ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার ৪০টি মুসলিম গ্রুপ তীব্র নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি অনলাইনের। এদিকে পূর্ববর্তী খবরে বলা হয়, সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সিডনির মার্টিন প্লেসে লোকজন কর্মস্থলে যাচ্ছিল। এ সময় লোকজন এক ব্যক্তিকে একটি ব্যাগ ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে লিন্ড চকোলেট শপ ও ক্যাফেতে ঢুকতে দেখেন। ক্যাফেতে ঢুকে সে অস্ত্রের মুখে এর কর্মচারী ও ক্রেতাদের জিম্মি করে। জিম্মির প্রায় ছয় ঘণ্টা পর লিন্ড ক্যাফের ওই ভবন থেকে তিনজনকে দৌড়ে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। এর আধা ঘণ্টা পর আরও দু’জন সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তবে তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে নাকি তারা পালিয়ে এসেছে তা জানা যায়নি। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ক্যাথরিন বার্ন বলেন, যারা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এসেছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপর পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলবে। প্রধানমন্ত্রী টনি এ্যাবোট হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ উল্লেখ করে বলেছেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। ক্যানবেরায় টনি এ্যাবোট সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুবই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আমি জিম্মিদের এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের দুশ্চিন্তা অনুধাবন করতে পারছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনার পর টুইটারে লিখেছেন, সিডনির ঘটনা অমানবিক এবং গভীর দুঃখের। আমি সবার সুস্থতা কামনা করছি। লিন্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানান হয়, গুরুতর এই ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, ক্যাফের ভেতরে জানালার সামনে কমপক্ষে তিন ব্যক্তি হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ক্যাফের কর্মী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের কালো রঙের একটি পতাকা ধরে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই পতাকার মধ্যে সাদা হরফে আরবী লেখা রয়েছে। এতে লেখা রয়েছেÑ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মোহাম্মদ হলেন তাঁর বার্তাবাহক। এই পতাকা জিহাদী গ্রুপের পতাকার মতোই। তবে এটা মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের পতাকার চেয়ে ভিন্ন। তবে চ্যানেল টেনে প্রচারিত সংবাদে বলা হয়, জিম্মিকারী প্রধানমন্ত্রী টনি এ্যাবোটের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন এবং ইসলামিক স্টেটের একটি পতাকা দেয়ার জন্য বলেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ক্যাথেরিন বার্ন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে জিম্মি সঙ্কট শুরুর পরপরই মার্টিন প্লেসে মার্কিন কনসুলেট খালি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া টিফানি এ্যান্ড কোং এবং জিমি চু স্টোর বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্যাংকগুলো তাদের অফিস বন্ধ করে দেয়। সিডনি অপেরা হাউস খালি করে দেয়া হয়েছে। কান্তাস এয়ারওয়েজ লিমিটেডের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। মার্টিন প্লেস এলাকায় যান চলাচল সীমিত করা হয়। সিডনি শহরের স্থল, নৌ এবং আকাশপথে ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো হয়। বাস, ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। সিডনি এয়ারপোর্টে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
×