ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করিনি’

নতুন মুখোশে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের পুরনো কথা-

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

নতুন মুখোশে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের পুরনো কথা-

সমুদ্র হক ॥ নতুন মুখোশে আবর্তিত হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র! এরাও ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় আয়োজনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করছে। অত্যন্ত সুকৌশলে এমন বক্তব্য দিচ্ছে যাতে মনে হবে মুক্তিযুদ্ধে তারা ভুল করেনি। সবচেয় বড় ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনাগুলোতে। এমন যুক্তি দেখায় মনে হবে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যা করেনি! চতুরতার সঙ্গে জামায়াত এই কথাগুলো বলিয়ে নিচ্ছে শিবিরের বর্তমান প্রজন্মের কণ্ঠ হতে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে জামায়াত-শিবিরের বড় এক নেটওয়ার্ক কাজ করে। তারা গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সকল খরচ বহন করার দায়িত্ব নিয়ে সুকৌশলে নিউরনে (মস্তিষ্কে) জামায়াতী মতবাদ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। লক্ষ্য করা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আশপাশে তারা প্রথমে ভাড়া বাড়িতে মেস ও ছাত্রাবাস খুলে গরিব ও নিজেদের আদর্শের শিক্ষার্থীদের সমবেত করে। এরপর লেখাপড়ার সকল কার্যক্রমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে থাকে। যারা ভাল ফল করে তাদের দিকে সুদৃষ্টি দিয়ে জামায়াতী আদর্শে গড়ে তোলার পালা শুরু করে। এরাই দিনে দিনে সূক্ষ্ম ছদ্মবেশে গড়ে ওঠে। এমন কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রগতিশীল ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও তারা নানা ছদ্মাবরণে অংশগ্রহণ করে। এসব পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের প্রথমে দেখে বোঝা যাবে না তারা কোন আদর্শের অনুসারী। দিনে দিনে শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে এরা খোলস ছাড়তে শুরু করবে। বিষধর সাপ যেমন খোলস ছেড়ে বের হয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় এরাও তেমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে মাঠে নামে। তৈরি হয় ক্যাডার বাহিনী থেকে নানা বাহিনী। শিক্ষা জীবন শেষ করার পর এরা প্রবেশ করে নিজেদের গড়ে তোলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার মান অনুযায়ী এরা এক্সিকিউটিভ পদ থেকে মধ্যম সারির কর্মকর্তা পদে যোগদান করে। কৌশল অবলম্বন করে সরকারী প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদার চাকরিতেও যোগদান করে। এদের নেটওয়ার্ক এতটাই ডিসিপ্লিনড যে সব কিছুই চলে চেন অব কমান্ডে। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কত ধাপ যে আছে তা পরখ করা খুবই কঠিন। কোনভাবে একটি অংশ আটক হলে অথবা প্রয়োজনের কৌশলে নিষ্ক্রিয় করা হলে দ্রুত রিপ্লেসমেন্ট হয়ে যায়। বর্তমানে দেশের এমন কোন জেলা শহর নেই যেখানে এ ধরনের নেটওয়ার্ক নেই। রাজশাহী মহানগরী ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে এদের রয়েছে শক্তিশালী ঘাঁটি। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মহানগরী রাজধানী ঢাকা শহরের চারধারে এদের আস্তানা আছে ক্লাসটার পদ্ধতির। চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, বগুড়া, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা এলাকাসহ দেশের প্রায় সকল এলাকায় গত ৪৩ বছরে এরা বিশাল বলয় তৈরি করেছে। পেশাজীবী প্রতিটি শ্রেণীর মধ্যে এরা ডুবসাঁতার দিয়ে অবস্থান করে। এমন কি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মধ্যেও এরা আছে। এরা নিজেদের আড়াল করতে কখনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ওঁৎ পেতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের পূর্ণ সহযোগিতা দেয় বিএনপি। অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে বাইপাস করে ঢুকে এরা কার্যসিদ্ধি করে। যখন টের পাওয়া যায় তখন সময়ও অনেকটা গড়িয়ে যায়। ভুল ব্যাখ্যায় তারা বক্তব্য শুরু করে জাতির বরেণ্য চলচ্চিত্রকার ও বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানকে দিয়ে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবির রাজাকার আল-বদর, আল-শামস হত্যা করে জহির উল্লাহর (জহির রায়হান) বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে। দেশ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের পর জহির রায়হানকে বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্ধান দিয়ে ডেকে নেয়া হয়। এরপর জহির রায়হানকে আর পাওয়া যায়নি। বিজয় অর্জনের ৪৩ বছর পর জামায়াত-শিবিরের তরুণ ফ্রন্ট রটিয়ে দিচ্ছে তারা জহির রায়হান ও শহীদুল্লাহ কায়সারসহ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেনি (কতটা ধৃষ্টতা)। এমনও বলছে জহির রায়হানের কাছে এমন অনেক ডকুমেন্ট ছিল যাতে সেগুলো প্রকাশ না হয় সেই জন্য তাকে হত্যা করা হয়। এমন অমার্জনীয় (এবং অসহনীয়) কথা শুনতে হচ্ছে। হালে জামায়াত-শিবির বর্তমান সরকারের (মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী দল) নানা কর্মকা-ের তির্যক মন্তব্য করে প্রচ্ছন্নভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। হালে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো তা হলো, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে ‘প্রেস’ স্টিকারযুক্ত দামী গাড়ি ও মাইক্রোবাস চলাচল করতে দেখা যায়। যার সংখ্যা অনেক।
×