ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫৮৫টির মধ্যে ৫০টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

৫৮৫টির মধ্যে ৫০টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এমন ৫৮৫ টি অভিযোগের মধ্যে যাচাই- বাছাই করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রায় ৫০টি অভিযোগের ওপর তদন্ত শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা। এর আগে জামায়াত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি, সাবেক আওয়ামী লীগ, মুসলীম লীগ, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি মামলার তদন্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। যার মধ্যে ১৩টি মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন দ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। চারটি মামলা রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। আপীল বিভাগে তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একটি মামলায় আসামির রায় কার্যকর করা হয়েছে। এদিকে নতুন মামলা তদন্ত করার জন্য তদন্ত সংস্থার দুই সম্বয়ক কয়েকটি জেলায় গেছেন। আগামী সপ্তাহে আরও কয়েক জেলায় যাবার কথা রয়েছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে একাধিক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। কোন কোন মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। এদিকে কিশোরগঞ্জের দুই সহোদরের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছিল তা প্রসিকিউশন পক্ষ তাতে অসঙ্গতি থাকায় ফেরত পাঠিয়েছে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই ঐ রিপোর্ট তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশন শাখায় আবার পাঠাবে। প্রসিকিউশনের জবাবে তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, এই বয়সের কোন বাধা নেই। এটা আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, তবু তদন্ত সংস্থা পুনরায় যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট প্রদান করবে। ৬ শতাধিক অভিযোগ থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ৫০ অভিযোগের ওপর তদন্ত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্ত সংস্থার প্রধান এম এ হান্নান খান যশোর তদন্ত করে বর্তমানে চট্টগ্রামে আছেন। অন্যদিকে সমন্বয়ক সানাউল হক ২০ ও ২১ ডিসেম্বর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাবেন। পাশাপাশি অন্যান্য তদন্ত কর্মকর্তাও বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করছেন। তদন্ত সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছেÑগিয়াস কাদের চৌধুরী ওরফে গিকা চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ নাসির, আশরাফ হোসেন, আঃ খালেক তালুকদার, মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, ইজাহার আহম্মেদ, সালামত উল্লা খান ওরফে আজ্ঞুবর পচইয়া রাজাকার, মহসীন হায়দার চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আকমল আলী, লাল মিয়া, মোঃ মতিন মিয়া, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভী, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, হাজী মোঃ আমজাদ আলী, রাজাকার আজিজ (হাবলু), রাজাকার আব্দুল মতিন, রাজাকার মৃত মনির আলী, আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজ্জুল্লাহ ওরফে ঘোড়া আজিজ, লিয়াকত আলী। এর বাইরে আরও নতুন কিছু মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থেই তাদের নাম দেয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে যশোরের কেশবপুর উপজেলার রাজাকার কমান্ডার আমিন উদ্দিন ও গ্রেফতারকৃত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার তৃতীয় দফা তদন্ত শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান ১০ ডিসেম্বর কেশবপুরের বিভিন্নস্থানে গিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। ১৯৭১ সালের ৮ ও ৯ আগস্ট গৌরী ঘোনার ইসমাইল হোসেন, বগার বশির গোলদার, চিংড়ার চানতুল্যা, সতীশ সরকার, কার্তিক কর্মকারসহ স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় কেশবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১১ মে যশোরের আমলি আদালতে ১৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন (নং: পি-১৪১/১০)। মামলাটির আসামি করা হয়েছে- কেশবপুর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আমিনুদ্দিন, হিজলডাঙ্গা গ্রামের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন ও আব্দুল বারী মোড়ল, আলতাপোল গ্রামের আব্দুল খালেক, ভরতভায়না গ্রামের হাসেম আলী, আনছার মোল্লা, মোকছেদ সরদার, কেসমত আলী ও আনছার ফকির, আগরহাটি গ্রামের আব্দুল বারী ওদুদী, ভারুরখোলা গ্রামের হোসেন আলী, বেলকাটি গ্রামের আকবর আলী, মোমিনপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মোড়ল, সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গণি শেখ এবং নেহালপুর গ্রামের ইব্রাহিম কারিগর। এ ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে Ñ নেত্রকোনার মুসলীম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি (৬২) ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহের (৬৪), পটুয়াখালীর রাজাকার বিএনপি নেতা ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই: শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেন, কিশোরগঞ্জের পলাতক আসামি রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে আলীর আলী, একই জেলার দুই সহোদর নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু। মামলাগুলোর বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, যে ৬ শতাধিক অভিযোগ এসেছে তার মধ্যে খুলনা বিভাগে অভিযোগের সংখ্যা বেশি। এ জেলা থেকে অভিযোগ এসেছে ১৪০৮টি। এর পর রয়েছে ঢাকা বিভাগ ৫০১, রাজশাহী বিভাগ ৩৭৭, চট্টগ্রাম ৩০১, বরিশাল ২৮৭, সিলেট ২১০ ও রংপুর বিভাগে ১৪৫টি অভিযোগ। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, তদন্ত সংস্থায় যে সমস্ত অভিযোগ এসেছে তা যাচাই- বাছাই করে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে নতুন করে কাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তা তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হলেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করব।
×