ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের মহাবিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতিহাসের মহাবিপর্যয়

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা সুন্দরবনের দেড় শ’ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সুন্দরবনের বিরাট এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘমেয়াদী বড় ধরনের পরিবশেগত বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বনবভিাগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া সুন্দবনের জলজ ও প্রাণীজ সম্পদের খাদ্য শৃঙ্খলাও ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুস আলী, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও জহির উদ্দিন আহমেদ ও যুক্তরাজ্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটির বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. ব্রান স্মিথ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ এই বনে এরআগে ছোটখাট জাহাজ ডুবি ও বর্জ্যতেল ছড়িয়ে পড়লেও তার মাত্রা তেমন বিস্তৃত ছিল না। গত মঙ্গলবারের তেল ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা সুন্দরবনের দেড়’ শ বছরের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। যা সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরীগাছসহ সর্ম্পূন জীববৈচিত্র্যের র্দীঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমন্বিত সুন্দরবন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. সরদার সফিকুল ইসলাম ও পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুলসহ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, দ্রুত ভেসে থাকা তেল অপসারণ করা না হলে এটা সুন্দরবনে ইকো সিষ্টেমে ও খাদ্য শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়তে পারে। যা বনের অনেক জীবজন্তু, পশুপাখির দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করবে। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত তেল অপসারণে কার্যকর সরকারী উদ্যোগের দাবি করেছেন। খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার থেকে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল অপসারণে বনবিভাগ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। সকাল থেকে দুর্ঘটনাস্থল শ্যালা নদীর আশপাশে সুন্দরবনের ছোট খালগুলো থেকে তেল সংগ্রহের কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এ জন্য ১০০টি নৌকাসহ ২০০জন শ্রমিক নিয়ে ভোর থেকে বনের ভেতরের ছোট খালগুলোতে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। বন বিভাগের তরফ থেকে প্রত্যেকটি খালে, বনের আনাচে কানাচে এ অভিযান চালানো হয়। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মোঃ আমীর হুসাইন জানান, পানি ছাকুনি করার মতো করে ভাটার সময় খাল গুলোতে প্রবেশ করে জোয়ার পর্যন্ত এ সংগ্রহ চলছে। এতে প্রতি আনাচে-কানাচে থাকা পাতার তেলও পরিষ্কার করা হচ্ছে। পানি থেকে তেল সরানো গেলে এরপর বনভূমির অংশ থেকে তেল সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শনিবার পর্যন্ত আট হাজার লিচার ভাসমান তেল এ পদ্বতিতে অপসারণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মুঃ শুকুর আলী জানান। এই উদ্যোগকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিবেশবিদরা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
×