ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতনকারীরা দেশপ্রেমিক, সিআইএ প্রধানের মন্তব্য

বুশের বিচার যে কারণে হবে না

প্রকাশিত: ০৩:১২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বুশের বিচার যে কারণে হবে না

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র নির্মম জিজ্ঞাসাবাদে পদ্ধতির গ্রাফিক্স ও বর্ণনার একটি রিপোর্ট গত সপ্তাহে প্রকাশের দেশে বিদেশে এখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দাবি করা হচ্ছে, কর্মসূচীর নির্দেশদাতা হিসেবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিচার করতে হবে। কারণ, মার্কিন আইনেও বন্দীদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন চালানো নিষিদ্ধ। খবর আলজাজিরা ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে তার পূর্বসূরি বুশকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না, তা নিশ্চিত। মঙ্গলবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রকাশিত ৫শ’ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯/১১ আক্রমণের পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আটক সন্দেহভাজন আল-কায়েদা জঙ্গীদের দিনের পর দিন ঘুমাতে না দেয়া, একঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা, ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত মাথার ওপর হাতবেঁধে রাখা ও ওয়াটার বোর্ডিং বা মুখ বেঁধে উপরে পানি ঢালার মতো সব নিষ্ঠুর পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সিআইএর গোপন বন্দীশালাগুলোতে এসব নির্যাতন চালানো হয়েছে; মার্কিন আইনে শারীরিক বা মানসিক যে কোন ধরনের নির্যাতন নিষিদ্ধ। কিন্তু ওবামা নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করবেন না। আইনের প্রয়োগক্ষেত্র কেবল য্ক্তুরাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা নয়, একজন মার্কিন নাগরিক যে কোন দেশে এই কাজ করুক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আনা যাবে। অন্যদিকে সিআইএ প্রধান জন ও ব্রেনান নির্যাতনমূলক কর্মকা-ের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। তার দৃষ্টিতে নির্যাতনকারীরা হলো দেশপ্রেমিক। তিনি এমনকি এসব কাজকে নির্যাতন বলে অভিহিত করতেও রাজি নন। ২০০৯ সালে ওবামা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরই তার এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, বন্দী নির্যাতনের জন্য বুশ প্রশাসনকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে না। কারণ, যারা এগুলো করেছে তারা সরল বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে এটা করেছিল। তাছাড়া এগুলো আইনের নির্দেশনার মধ্য থেকেই করা হচ্ছে বলে সিআইএ কর্মকর্তারা বুশকে জানিয়ে ছিলেন। তিন বছর তদন্ত চালানোর পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল প্রসিকিউটররা এ বিষয়ে কোন মামলা করা হবে না বলে জানান। গত সপ্তাহে সিআইএ’র নির্যাতন রিপোর্ট প্রকাশের পর মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন প্রকাশিত রিপোর্টে এমন কিছু নেই যে কারণে বিচার না করার তাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আরেকটি কারণ দেখান হচ্ছে যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে নির্যাতনের কৌশলগুলো ব্যবহার করতে হয়েছিল। রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ভেতর বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতার ছাপ ছিল। সন্দেহভাজন আল-কায়েদা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বিশাল এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোন ব্যবস্থা বা সরঞ্জামাদি ছিল না। ওবামা আরও যে কারণে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক নন তা হলোÑ ৯/১১ পরবর্তী ঘটনার জন্য বুশ বা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডিক চেনির বিরুদ্ধে যদি মামলা হয় তবে সে সময়কার সিআইএর অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও বিচারের আওতায় নিতে হবে। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ড্রোন হামলার জন্য তাকে (ওবামা) বা তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। কারণ, সন্দেহভাজন জঙ্গী হত্যার জন্য নির্বিচার ড্রোন ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ও বাইরে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। সিআইএ নির্যাতনের জন্য ওবামা সাবেক বুশ প্রশাসনকে যে বিচারের কাঠগড়ায় তুলছে না, তেমনি তাদের আগাম ক্ষমা ঘোষণা বা কোন ট্রুথ বা রিকনসিলিয়েশন কমিশনও গঠন করা হচ্ছে না।
×