ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী শোডাউন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী শোডাউন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকাতে আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। নতুন বছরের শুরু থেকেই রাজপথ দখলে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। আগামী ৫ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রথম বর্ষপূর্তির দিন ঢাকাসহ সারাদেশেই সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ সেøøাগান নিয়ে সারাদেশের ৩শ’ নির্বাচনী এলাকাতেই ওইদিন বিকেল সাড়ে তিনটায় একযোগে আনন্দ মিছিল, বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। শুধু ৫ জানুয়ারিই নয়, পুরো জানুয়ারি মাসই শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় থাকার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আন্দোলন-সংগ্রামের হুমকিকে আমলে নিয়েই প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার দু’ধরনের প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অংশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেই সাংগঠনিক শক্তির মহড়ার পরিকল্পনা করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা-মহানগরে প্রধানমন্ত্রীর সফর, চৌদ্দ দলের নেতাদের ঝটিকা সাংগঠনিক সফর, সমাবেশ, তৃণমূলের সম্মেলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে প্রত্যেক জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে অর্থাৎ প্রতিটি নির্বাচনী আসনেই ব্যাপক শোডাউন করার নির্দেশ ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে তৃণমূল নেতাদের কাছে। সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীর ১৬টি আসনেও একযোগে মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে ব্যাপক শোডাউন করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে জানুয়ারির মাসজুড়েই ৫ জানুয়ারি-পূর্ব ও পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নারকীয় সহিংসতা ও মানুষ হত্যার ঘটনা ভিডিও, পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি আগামী মার্চের মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। মূলত বিএনপি মাঠে আন্দোলনের নামার আশঙ্কাই আওয়ামী লীগ আরও সতর্ক অবস্থানে থাকবে। জানা গেছে, গত ৩১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য আন্দোলন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলায় কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপি আন্দোলনের নামে যেন মাঠ দখল করতে না পারে সে জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সারাদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে দলের সিনিয়র নেতাসহ কয়েকজনকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। আর সেই নির্দেশ অনুযায়ীই নতুন বছরের শুরু থেকেই সারাদেশের রাজপথ দখল নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ ব্যাপারে জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সম্মেলন করা হচ্ছে। আর বিএনপি কখনও আন্দোলন করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। আর তারা যাতে মাঠে আর ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে তার জন্য আমরাও মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকব। আর মধ্যবর্তী নির্বাচনের তো প্রশ্নই আসে না। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেও নির্বাচন হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূলের সম্মেলনের জন্য গঠিত ১০টি শক্তিশালী টিম ইতোমধ্যে সারাদেশ সফর করে একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তারই অংশ বিশেষ বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন করছে দলটি। আর এ কাজগুলো এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন এবং প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে নতুন কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা নিয়েই ইতোমধ্যে প্রায় ২৫টি জেলার সম্মেলন শেষ করে ফেলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁদের আশাবাদ, ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ না হলেও জানুয়ারির মধ্যে সব জেলা-বিভাগের সম্মেলন শেষ করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ক্ষমতাসীন চৌদ্দ দলের নেতারাও নতুন বছরের শুরু থেকেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার ছক করতে ১৪ দলের নেতারা বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী ১৫ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১৪ দলের সমাবেশ ও গণসংযোগ করার কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালিও করবে দলটি। এরপর আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টায় এক বিশাল জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ছাড়া নতুন উদ্যমে জানুয়ারির প্রথম থেকেই শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশব্যাপী সফর কর্মসূচী। যদিও অনেক আগে থেকেই এ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। তবে এবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলায় সমাবেশ করবেন। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর করবেন তিনি। পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে পরিচিত জেলাগুলোতেও সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতার জন্য আলোচিত এলাকাগুলোও এ সফর কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে। আওয়ামী লীগের যৌথ সভা ॥ পাঁচ জানুয়ারি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওইদিন ঢাকাসহ সারাদেশেই ব্যাপক শোডাউন করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এ তথ্য জানান। বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে হানিফ বলেন, পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশের সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতো। ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে চলে যেত বাংলাদেশ। অনেকে বলেছেন নির্বাচন না হলে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থার সৃষ্টি হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত বাধা অতিক্রম করে নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য এই দিনটিকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে। এদিন দেশের সকল জেলা-উপজেলায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। পাঁচ জানুয়ারিতে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, কে কি আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে সেটা আওয়ামী লীগের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কর্মসূচী পালন করে যাবে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে আওয়ামী লীগ। ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে যৌথ সভায় সতীশ চন্দ্র রায়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি, মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আহমদ হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুল মতিন খসরু এমপি, মোঃ আবদুস ছাত্তার, হাবিবুর রহমান সিরাজ, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, আব্দুর রহমান এমপি, আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, কামরুল ইসলাম এমপি, আসলামুল হক আসলাম এমপি, হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপি, আব্দুল হক সবুজ, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, সাধারণ সম্পাদক পংকজনাথ এমপি, যুবলীগের শহীদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মহিউদ্দিন মহি, ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম, ফজলুল হক মন্টু, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, যুব মহিলা লীগের কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মুখলেছুর রহমান বাদল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ইকবাল আর্সনাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দলের সভাপতিম-লীর সদস্য সতিশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আবদুল মতিন খসরু, এম এ আজিজ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, একেএম রহমতউল্লাহ, আমিনুল ইসলাম আমিন, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগরীর সংসদ সদস্য ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রতিটি সংসদ সদস্যকে ৫ জানুয়ারিতে স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকাতে ব্যাপক শোডাউন করার নির্দেশ দেয়া হয়।
×