ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১০ প্রেক্ষাগৃহে ‘যুদ্ধ শিশু’

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

১০ প্রেক্ষাগৃহে ‘যুদ্ধ শিশু’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকার দুটিসহ সারাদেশের ১০টি সিনেমা হলে আবারও মুক্তি পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধ শিশু’। এর আগে চলচ্চিত্রটি সীমিত সময়ের জন্য প্রদর্শিত হলেও বিজয়ের মাস উপলক্ষে চলচ্চিত্রটি দেশব্যাপী মুক্তি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাইমা সেন। আরও আছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ফারুক শেখ, ভিক্টর ব্যানার্জি, পবন মালহোত্রা প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির আমদানিকারক সুদিপ্ত দাস জানান, ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লবাস্টার সিনেমাসে মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া পাবনার রূপকথা, দিনাজপুরের মর্ডান, কুমিল্লার মধুমতি, নেত্রকোনার হিরামন, জয়পুর হাটের পৃথিবী, শেরপুরের রূপকথা এবং কুষ্টিয়ার বর্নালী হলে চলচ্চিত্রটি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া আগামী ১৯ ডিসেম্বর টঙ্গির একটি সিনেমাহল এবং ২৬ ডিসেম্বর যশোরের মনিহার এবং নারায়ণগঞ্জের একটি হলে চলচ্চিত্রটি দেখানো হবে। সূত্র জানায় ‘যুদ্ধ শিশু’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার দেখা যাচ্ছে ইউটিউবে। প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে একযোগে ভারত এবং বাংলাদেশে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধ শিশু’। এ চলচ্চিত্রটির প্রথম দিকে নাম ছিল দ্য বাস্টার্ডা চাইল্ড। বিতর্কিত নামের কারণে ভারতীয় সেন্সরবোর্ড চলচ্চিত্রটি আটকে দেয়। এক্ষেত্রে পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতের অজুহাত বা যুক্তি কানে তোলেনি ভারতীয় সেন্সরবোর্ড। ফলে নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘চিলড্রেন অব ওয়ার বা যুদ্ধ শিশু’। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি নিয়ে বাংলাদেশে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ শিশু চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ এর মার্চ থেকে ‘যুদ্ধ শিশু’র কাহিনীর সূত্রপাত। বাংলাদেশের কোন এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বৈরী সময়ে একটি পরিবারের যাত্রা, একজন সাংবাদিকের মুক্তিসেনায় রূপান্তর, তার স্ত্রীর পরিণতি এবং যুদ্ধ-শিশুর জন্ম-হৃদয় ছোঁয়া মর্মস্পর্শী এক কাহিনী। যুদ্ধ শিশুরা অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা কি তাদের মেনে নেব? আমরা জানি তারা নিরপরাধ। হয়ত বা তারাই সত্যিকারের বীর-তারপরও আমরা কি তাদের মেনে নেব? ‘যুদ্ধ শিশু’ সেই সত্যকে তুলে এনেছে, যা বিশ্বের চোখ থেকে এতদিন আড়াল করে রাখা হয়েছিল। দেখেও যা আমরা দেখতে চাইনি, সামনে এলেও ভয়ে-লজ্জায় অন্ধকারে ঢেকে রেখেছি যে সত্যকে, তা-ই তুলে এনেছে নয় মাসের অনেক না বলা কথা নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির গল্প শুরু হয় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি সাক্ষাতকারের অংশ দিয়ে, এরপরই ২৬ মার্চের মধ্য রাতে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। এর পর গল্প এগিয়ে যায়। আধ ঘণ্টা পর চলচ্চিত্রের গল্প জমে ওঠে। যুদ্ধ শিশুর গল্পটি তিনটি প্লট থেকে দেখানো হয়েছে, প্রথমত পাক সেনাদের হাতে বন্দী আমাদের একাত্তরের নারীদের চিত্র। অমানবিক পাশবিক নির্যাতন, ধর্ষণের পর ধর্ষণের শিকার নারীদের উপর নির্দেশ জারি হয় তাদের পাকিস্তানী সন্তান ধারণ করতে। যারা অক্ষম তাদের হত্যা করা হয়। এখানেই বন্দী থাকেন রাইমা সেন। চলচ্চিত্রে তার চরিত্রের নাম ফিদা। সে মনে করে তার স্বামী আমিরকে মেরে ফেলেছে হানাদাররা। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্র ফুটে উঠেছে অন্য আরেকটি প্লটে। ফিদার স্বামী আমির মানে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এখানে সাংবাদিক। যিনি কলম ছেড়ে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। সম্প্রতি পরলোকগত ভারতীয় শক্তিমান অভিনেতা ফারুখ শেখ অভিনয় করেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে। এই দুটি প্লট একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত। তৃতীয় আরেকটি প্লটে দেখা যায় দুজন সবকিছু হারানো কিশোর কিশোরী ভাইবোন। ভাইটি ছোট, তাদের বাবা ভাইটির উপর বোনের দায়িত্ব দিয়ে যায়। ফ্ল্যাশব্যাকে বাবার সঙ্গে ভাইটির কথোপকথন বেশ মর্মস্পর্শী, ভাইটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যত বিপদই আসুক বোনের গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগতে দেবে না। একদল ঘরছাড়া মানুষ, যারা আশ্রয়ের খোঁজে চলছে ভারতের দিকে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যাণার্জি। দুই ভাই বোন যোগ দেয় এদের সঙ্গে। পথে নানা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে যায় নিজের বোনকে, তার কাছে তার বোনটিই যেন দেশমাতৃকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরাঙ্গনাদের অবদান ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রের নামকরণও সেখান থেকেই। মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই সাহসী বীরাঙ্গনারাও যুদ্ধ করে গিয়েছে প্রতিনিয়ত। গর্ভে লালন করা যুদ্ধ শিশুদের মুক্তি হয়েছে নয় মাস সংগ্রামের পর, তাদের শরীরে পাকসেনাদের নয় বইছে সাহসী বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার রক্ত। এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান তারা। প্রথমে আমরা বাংলাদেশী, তারপর বাঙালী, তারপর মুসলমান মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি এই তিনটি কথা বারে বারে উচ্চারিত হয়েছে চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ, আলোর কাজ এবং শিল্প নির্দেশনা ভাল। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাইমা সেনও ভাল করেছেন।
×