ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষায় প্রতারণা!

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

শিক্ষায় প্রতারণা!

দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ আশাতীত অগ্রগতি সাধন করেছে এ কথা আজ স্বীকৃত। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় দেশের অগ্রযাত্রা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। শিক্ষার এ অগ্রগতি বিশ্বসভায় দেশকে সম্মানের আসনে বসিয়েছে। তবে প্রদীপের নিচে অন্ধকার- এরকম আপ্তবাক্য মাঝে মাঝে আমাদের মনকে বিষণ্ন করে তোলে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতারণার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন লম্ফঝম্ফ করলেও এতে তাদের আগ্রহের ঘাটতি দেখা যায়- ফলে বিষয়টি আরও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শিক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা মনে করছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এ খাতের ক্রম অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত ও বিপন্ন করতে চায়, তাদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে অন্যদের মধ্যে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হোক যাতে কেউ এ পথে আর না হাঁটে। বুধবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘ভুয়া কলেজের প্রতারণায় শতাধিক পরীক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত’ শীর্ষক সংবাদটি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতারণার চিত্রটি আবার নতুন করে প্রশ্নের সৃষ্টি করল। রাজধানীর উত্তরায় অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব এক কলেজে এ প্রতারণার ঘটনাটি ঘটে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। প্রতারণার এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে প্রতারণার শিকার শতাধিক ছাত্রের এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি যেন অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সচেতন মহল যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আবেদন জানিয়েছে। শিক্ষা খাতে প্রতারণা, যথাযথ উদ্যোগ না নেয়াসহ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের শীর্ষমহল বার বার সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ চক্র দিনকে দিন যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এই চক্রটি শিক্ষাকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে নিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিচ্ছেÑ ফলে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে ভুক্তভোগী ছাত্র-অভিভাবকসহ শিক্ষানুরাগীরা। সম্প্রতি পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে চক্রটি কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা পিএসসি পরীক্ষার এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটিকে ক্ষমাহীন অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এক সমীক্ষায় জানা যায়, সম্প্রতি অন্তত ৮৩ বার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এই চক্রটি শিক্ষার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে ভিন্ন খাতে অর্থাৎ শিক্ষাকে বাণিজ্য হিসেবে দাঁড় করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। এই পদ্ধতিতে পা-ুলিপি থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র সরাসরি ছাপার জন্য প্লেট আকারে তৈরি হবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এই পদ্ধতি অনুসৃত হলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা শূূন্যের কোটায় চলে আসবে। উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সর্বপ্রথম ব্যাপক আলোচনায় আসে। শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা সরকারের সাফল্যকে যেখানে উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দিচ্ছে, সেখানে কোন কোন ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা যেন এ খাতের সাফল্যগাথাকে ম্লান করে দিতে না পারে সেদিকে সবার কঠোর নজর দেয়া জরুরী।
×