ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

একজন বিশ্ব অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে; এখনই পদক্ষেপ নিন। কথাটা বলেছেন তিনি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বৈঠকের উদ্বোধন করতে গিয়ে। আমাদের স্মরণে আছে, চলতি বছরের গোড়ার দিকে জাকার্তায় প্রদত্ত এক ভাষণে একইভাবে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি যথার্থই বলেছিলেন, এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত যে, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি, তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও হুমকি। আমরা ভুলে যাইনি যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যে দুটি দেশ তার ভেতর আবার এগিয়ে আছে জন কেরিরই দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যে গ্রীনহাউস গ্যাস, সেটি নির্গমন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার পরেই চীন। লাতিন আমেরিকার পর্যটন শহর লিমায় অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনে বান কি মুনের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে মিডিয়া তুলে ধরেছে। এর ভেতর দিয়ে প্রকারান্তরে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবিই উঠে এসেছে। সত্যিই তো এই গ্রহবাসী আমাদের দ্বিতীয় কোন পৃথিবী নেই বসবাসের জন্য। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি হলে পৃথিবীর বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য অরণ্যে রোদনের শামিল হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। পরিবেশবাদীরা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বরাবরই উচ্চকিত। তাঁরা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করছেন : উন্নত বিশ্বের ভোগ-বিলাসিতা আর তর্কের আড়ালে বাদবাকি দুনিয়ার বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। লিমা সম্মেলনকে ঘিরে বিশ্ববাসীর অনেক প্রত্যাশা থাকলেও শিল্পোন্নত দেশগুলো সুকৌশলে নিজেদের দায় এড়িয়ে চলেছে। লস এ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল ও গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থায়ন প্রশ্নে তারা নানা ফাঁকফোকর খুঁজে চলেছে। এখন তারা উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল খাটিয়ে বলছে, বিশ্বব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তহবিল ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়ন করুক। অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে রশি টানাটানি শেষই হচ্ছে না। ২০১৫-২০২০ কালপর্বে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড পরিচালনার লক্ষ্যে কিভাবে তহবিল সংগৃহীত হবে সেটা পরিষ্কার না হওয়াটা দুঃখজনক। ২০২০ সাল নাগাদ গ্রীন ক্লাইমেট তহবিলের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার কোন্্ কোন্্ উৎস থেকে কিভাবে সংগৃহীত হবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অস্পষ্টতা কাটেনি। বলা দরকার, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এর পরের দুটি অবস্থানে রয়েছে সিয়েরালিওন ও দক্ষিণ সুদান। এ র্যাঙ্কিংটি করেছে ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফট। ‘জলবায়ু শরণার্থী’ বলে একটি ধারণাও তৈরি হয়েছে ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনার ব্যাপক এলাকা বিধ্বস্ত হওয়ার পর। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাবে বলে বহু আগেই বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। এমনিতেই দেশে রয়েছে বিপুল জনসংখ্যার চাপ, তার ওপর ‘জলবায়ু শরণার্থী’র সংখ্যা বাড়লে সমস্যা আরও বাড়বে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্বন নিঃসরণ কমাতেই হবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন উন্নত বিশ্বকে একটি আইনী বাধ্যবাধকতায় নিয়ে আসা। এ ব্যাপারে বৈশ্বিক সমঝোতার কোন বিকল্প নেই।
×