ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৩:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ জাতীয় অধ্যাপক  কবীর চৌধুরী

আজ ১৩ ডিসেম্বর। ২০১১ সালের এই দিনে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ৮৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। পরিণত বয়সে, বিশাল বিস্তৃত কর্মযজ্ঞের অধিকারী কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবার নাম আবদুল হালিম চৌধুরী, মা উম্মে কবীর আফিফা। বাবা-মায়ের চৌদ্দ সন্তানের মাঝে কবীর চৌধুরী সবার বড়। তাঁদের পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার গোপাইয়েরবাগ গ্রামে। কবীর চৌধুরীর কর্ম ও জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি দুই শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা, অনুবাদ সাহিত্যের একজন সিদ্ধহস্ত অনুবাদক, সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদের সফল কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্ঠাবান অধ্যাপক (১৯৭৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন), অসংখ্য গণমুখী আন্দোলনের স্থপতি, মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধের মতো অপশক্তির বিরুদ্ধে এক নির্ভীক যোদ্ধা। সর্বোপরি অসাধারণ মানবিক গুণে গুণান্বিত একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুই রাষ্ট্রীয় সম্মান, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও একুশে পদক দিয়েও সরকার তাঁর ব্যাপক কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁরই জীবদ্দশাতে। থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী ও থিয়েটার স্কুল-বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের এই দুইটি অন্যতম প্রধান সংগঠনেরও তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করার জন্য এবং একটি বিজ্ঞানমনস্ক মানবিক সমাজ গড়ার জন্য প্রণীত শিক্ষানীতি তৈরির ক্ষেত্রেও কবীর চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাঙালীসমগ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। একেবারে গোড়ার দিকে এই প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে নাট্যব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নাট্যকার সাঈদ আহমেদ, সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান প্রমুখ বিভিন্ন রকম উপদেশ ও সহযোগিতা করে এসেছেন। কবীর চৌধুরী সে সময় তাঁর কর্মযজ্ঞে খুবই তৎপরÑ বই প্রকাশ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনে নেতৃত্ব দানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত। সমাজের কীর্তিমান বাঙালীর কর্ম ও গৌরব বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে অবহিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর দেখে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠিত বাঙালীসমগ্র জাদুঘর আর্থিক অনুদান ও স্থায়ী কাঠামোর জন্য ঢাকায় এক খ- জমি বরাদ্দের লক্ষ্যে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। ২০১০ সালের মার্চ মাসে মহান স্বাধীনতা দিবস ৪০তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে বাঙালীসমগ্র এক শ্রদ্ধাঞ্জলির আয়োজন করে। কবীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ক ৫০টি দুর্লভ স্মারকের প্রদর্শনী ও দুইটি বই প্রকাশ করা হয়। জুলাই ২০১০ এ জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ১২৫তম জন্মদিনের স্মরণানুষ্ঠানেও কবীর চৌধুরী ছিলেন সভাপতি। প্রথম বাঙালী মুসলমান চিত্রকর কাজী আবুল কাশেমের আত্মকথা ‘পুবের জানালা’ বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশের সময় বই মেলায় নজরুল মঞ্চে এসে কবীর চৌধুরী মোড়ক উন্মোচন করেন। বাঙালীসমগ্র জাদুঘর ২০১১ সালের শেষের দিকে ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রদত্ত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ (১৯৫৪-১৯৫৮)’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রকল্প প্রণয়ন করে। গবেষণা প্রস্তাব নির্বাচন কমিটিতে সদস্যরা ছিলেন- জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে গবেষণা কর্মটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্পণ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাঙালীসমগ্র জাদুঘর। সময়ের নিয়মে সব কিছু একদিন সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু যে কোন প্রয়োজনের পরামর্শ ও আলোচনার জন্য যাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থানটি যে হারালাম আমরা সেই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ হবে কি দিয়ে এবং কিভাবে? লেখক : নির্বাহী পরিচালক, বাঙালীসমগ্র জাদুঘর
×