ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খবরগুলো আমাদের শঙ্কিত করে

প্রকাশিত: ০৩:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

খবরগুলো আমাদের  শঙ্কিত করে

কিছুদিন থেকে সংবাদ মাধ্যমের খবর হলো- জামায়াতপন্থী জঙ্গীরা ভারতে আশ্রয় নিয়ে উচ্চতর সশস্ত্র জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ভারতে নিয়ে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছে। শোনা যায়, তাদের সংখ্যা তিন শতাধিক। এদের মধ্যে নারীরাও রয়েছে। এতে যে কোন সচেতন মানুষই শঙ্কিত হবেন। তাছাড়া ওদের টার্গেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনা লালন করেন। তিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারায় বাংলাদেশ পরিচালনা করছেন। সর্বোপরি তিনি বাংলাদেশের জাতি রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট স্বদেশ রায়ের ভাষায় বাঙালী জাতির ‘একমাত্র বাতিঘর’। শেখ হাসিনা ছাড়া আর যত নেতানেত্রী আছেন দলে অথবা দলের বাইরে, সব বাংলাদেশের জন্যে বোঝা এবং তাঁদের দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় আশা যারা করে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। সুলতানা কামাল, ইফতেখার, বদিউল আলম মজুমদার গং যত থিওরিই আওড়ান না কেন, বিদেশের অর্থে যত লম্বা লম্বা কথাই বলুন না কেন, খালেদা জিয়া যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন, তাহলে তাদের মুখ বেলুনের মতো চুপসে যাবে। খালেদা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের চালচিত্র কি হবে : ১. প্রথমেই সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবে। ২. আবারও ২০০১ থেকে ২০০৬-এর মতো আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করবে। ৩. মানুষের হাত পা’র রগ কাটবে। ৪. পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করবে। ৫. ট্রেন, বাস, টেম্পো, রিকশা-অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারবে, ঘুমন্ত চালককে হত্যা করবে। ৬. আবারও হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবন সৃষ্টি হবে। ৭. হাজার হাজার পবিত্র কোরআন হাদিস (সঃ) পোড়ানো হবে। ৮. লাখ লাখ গাছ কাটা হবে। ৯. সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নেমে আসবে। ১০. আবার ট্রাক ভরে, স্যুটকেস ভরে বিদেশে টাকা পাচার হবে। যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের দুষ্টক্ষত কি? একবাক্যে বলা যাবে মিলিটারি জিয়া ও তার পরিবার। যে কারণটি আমি বহুবার বলেছি, তা আজ আবার উল্লেখ করতে চাই। জিয়া মিলিটারি শাসন চালিয়ে যে ক্ষতি বাংলাদেশের করেছে, তারচে’ বড় ক্ষতি করেছে ৩০ লাখ শহীদ ও ৪ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে আবার সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান বানাবার ষড়যন্ত্র চালিয়েছে। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবির (তখনকার ছাত্রসংঘ), মুসলিম লীগসহ সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি জান্তার সঙ্গে মিলে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদর-আলশামস-এর বিচার করার জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে দেশব্যাপী ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী ৩৮ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিচার শুরু হয়েছিল। ১১ হাজারের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৭শ’ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদী সাজা হয়েছিল। কিন্তু জিয়া তার মিলিটারি ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনালগুলো ভেঙ্গে দিয়ে সব অপরাধীকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আর খালেদা জিয়া তো যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে, বাড়িতে, শহীদদের রক্তে রাঙ্গা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মতো এমন বিশ্বাসঘাতকতা এ বাংলায় এর আগে করেছিল কেবল মীর জাফর আলী খাঁ। জিয়া বলেছিলেন ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম।’ আসলেই জিয়া পরিবারের জন্যে টাকা কোন সমস্যাই নয়। নইলে তাঁদের দুই ছেলে গত ৭ বছর ধরে কিভাবে লন্ডন এবং কুয়ালালামপুরের মতো ব্যয়বহুল শহরে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে (তারেক লন্ডনে এবং কোকো কুয়ালালামপুরে)। তাও আবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। কোথা থেকে আসে ঐ পশ জীবনযাপনের অর্থ? কোথা থেকে আসে দামী দামী গাড়ি কেনার পয়সা? এ প্রশ্ন আজ মানুষের মাঝে। আর তাই শেখ হাসিনা তাদের টার্গেট। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা খাগড়াগড় গ্রামে যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল তা ছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণের বোমা। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার খবরে (৮ ডিসেম্বর) বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের হোতা এবং পলাতক অবস্থায় আসাম থেকে গ্রেফতারকৃত শাহনূরের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে যে, তাদের টার্গেট প্রধানত শেখ হাসিনা। ওই জঙ্গীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। আবার অন্যদিকে খালেদা জিয়া তাঁর জোট নিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৫ জানুয়ারি বিগত নির্বাচনের বর্ষপূর্তি, যে নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ না করে বিরোধীদলীয় নেতা বা সংসদে বসার আসন- দুই-ই হারিয়েছেন। অর্থাৎ আম-ছালা দুই গেছে। এখন তিনি মরিয়া। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য জোটে জঙ্গীদের আস্ফালন থাকলেও নিজ দলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয়। তাঁরা বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের এক বছর মাঠে নেমে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু প্রতিটি আন্দোলনেই জামায়াত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক দলগুলো তাকে সহিংস ধারায় নিয়ে গেছে। ফলে জনগণ আন্দোলন থেকে দূরে সরে গেছে। দলের নেতাকর্মীরাও এখন আর তার ওপর ভরসা করতে পারছে না। খালেদা জিয়াও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। এ গেল শঙ্কার একদিক। আরেক দিক হলো শেখ হাসিনার নজিরবিহীন সাহসী অর্জনগুলোও এক শ্রেণীর নেতা-মন্ত্রী-এমপি ম্লান করে দিচ্ছে। তারা সরকারের এবং দলের এজেন্ডা বাদ দিয়ে নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নে এতবেশি বেপরোয়া যে, জনগণের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিতে চাই-আজকাল রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের কিছু বিলবোর্ড দেখা যায়, যেগুলোতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট ছোট ছবি বিলবোর্ডের এক কোণায় লাগিয়ে নিজের ঢাউস মার্কা একটা ছবি সেঁটে রাজপথের পাশে লাগিয়ে দিচ্ছে। কোন কোনটাতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্ট্যাম্প সাইজ ছবিও এক কোণায় দিয়ে কোন এক বটতলী-কদমতলী ইউনিয়ন... লীগের নেতার লাইফ-সাইজ ছবি লাগিয়ে টানিয়ে দিচ্ছে। পথচারীরা তা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। আছেন জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী তাঁদের কেউ কেউ এমন সব কাজ করেন যা মানুষের হাসির খোরাক হয়। আবার কেউ কেউ ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’-এর জোরে জনপ্রতিনিধি হয়ে, মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রীর মতো আগে-পাছে পুলিশ নিয়ে চলাফেরা করেন। কেউ বা নদী দখল-খাস জমি দখল করছেন। কক্সবাজারের বদি মিয়া তো যুব সমাজ ধ্বংসকারী মাদক ‘ইয়াবা’ চোরাচালানের (?) সঙ্গে জড়িত বলে মানুষ বিশ্বাস করে। কিছুদিন আগে কারাগারে গেলেও সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে। তার অনুসারীরা নাকি তাকে জেল গেট থেকে ফুলের মালা পরিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে। এখানেই আমাদের শঙ্কিত করে। তারা ভুলে যায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কন্যা শেখ হাসিনা জাতির হাল ধরেছিলেন বলেই আজ কেউ নেতা, কেউ মন্ত্রী। অথচ তাদের অনেকের অপকর্মের দায়ও বহন করতে হয় বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকেই। আমাদের শঙ্কা এখানেই। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×