ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিক্ষুকের মেয়েও মাস্টার্স করছে

শিক্ষায় এখন পায়রাবন্দের মেয়েরা এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

শিক্ষায় এখন পায়রাবন্দের মেয়েরা এগিয়ে

মানিক সরকার মানিক, রংপুর থেকে ॥ রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত হলেও সামাজিকভাবে একটি সুখবর আছে পায়রাবন্দের। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের উদ্ঘাটিত সেই ‘মাকড়া বুড়ো’ চরিত্রের লোকজন এখন আর নেই পায়রাবন্দে। ‘মাকড়া বুড়ো’ তাঁর ৮৪ বছর বয়সে একে একে বিয়ে করেছিলেন ১৯টি। ৮৪ বছর বয়সে সবশেষ যে মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করেছিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তাঁর সঙ্গে সংসারও করেছেন তিনি। আগে এসব কিছুই সম্ভব ছিল শুধু অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর অসচেতনতার কারণেই। কিন্তু এখন সে চিত্র আর নেই পায়রাবন্দে। পাল্টে গেছে পুরোটাই। মাত্র ক’বছর আগেও যে পায়রাবন্দের নারীরা অনেকটাই ছিল ‘অবরোধ বাসিনী’, অনেকেই ঘর হতে বের হওয়া কিংবা স্কুল-কলেজে যেতে বাধার সম্মুখীন হতো, অনুষ্ঠান কিংবা নাটক করা যাদের কিছু ছিল দুঃস্বপ্ন আর দুঃসাহসের মতো, সেই পায়রাবন্দের নারীরাই আজ পাল্টে ফেলেছে সেখানকার সামাজিক চিত্র। অবাক করার মতো ব্যাপার, লেখাপড়ায় পায়রাবন্দের নারীরা এখন পুরুষের চেয়েও অনেক এগিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পায়রাবন্দে নারী শিক্ষার হার এখন ৬৪ ভাগ আর পুরুষ ৩৬। এই যে পরিবর্তন এর সবকিছুই হয়েছে সামাজিক সচেতনতার কারণে। যে পায়রাবন্দে এক সময় রোকেয়ার অনুষ্ঠান করতে গেলে মঞ্চ থেকে মাইক হারমোনিয়াম নামিয়ে নেয়া হতো, সেই পায়রাবন্দের মেয়েরাই এখন নাটকের দল গঠন করে নিয়মিত নাটক, গানবাজনা করছে। মা ভিক্ষা করে কিংবা অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ কিংবা রিক্সা চালায় বাবা সেসব পরিবারের সন্তানেরাও এখন স্থানীয় স্কুল-কলেজ ছাড়াও লেখাপড়া করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন বুনছে তারা চিকিৎসক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ারও। পায়রাবন্দের এক ভিক্ষুকের পরিবারের মেয়ে দেশে লেখাপড়া শেষ করে ফেলোশিপ করতে এখন বেলজিয়ামে। বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রতিবন্ধী কুমারী দুলালী রানী মহন্ত যার দুটো পা নেই। জানালেন, তার বাবা ঢাকায় রিক্সা চালান। তাঁর বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। সে এক কিলোমিটার পথ হেঁটে এসে পরে রিক্সা কিংবা ভ্যানে করে কলেজে আসে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
×