ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন খাতে বরাদ্দ কমছে ৪ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

তিন খাতে বরাদ্দ কমছে ৪ হাজার কোটি টাকা

হামিদ উজ-জামান মামুন ॥ চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ কমছে। এর মধ্যে বিদ্যুত, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে কমানো হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ ব্যয়ের অক্ষমতার কারণে এ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই শুরু হওয়া সিরিজ বৈঠকে অর্থ সমর্পণের বিষয়ে এসব খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো জানিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরেন এইড বাজেট এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস (ফাবা) উইংয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ফরিদা নাসরিন বলেন, ডোনার এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে অর্থায়ন তথা অর্থ ছাড়ে কোন সমস্যা নেই। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। যেখানে বেশিরভাগই ছিল নিজেদের অক্ষমতা। এর মধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে প্রকল্পের ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারিং এ সমস্যা, ই-টেন্ডারিং ও কনসালটেন্ট নিয়োগে বিলম্বের কথা জানিয়েছে। তিনি বলেন, এসব খাতের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ ছাড়াও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ধারাবাহিক বৈঠক শেষ হলে এর বিস্তারিত জানা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে উন্নয়নে বার বার অর্থ সংকটের কথা বলা হয়। কিন্তু দেখা যায় বরাদ্দ দিলে তা ব্যবহার করতে পারে না। এজন্য সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে কথা বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্দ দেয়া উচিত। এতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার অংশ কাটছাঁট প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে ৪ দিনব্যাপী ধারাবাহিক বৈঠকে বসেছে ইআরডি। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্প্রতিবার ৩২টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিদ্যুত, তৈল গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং শিল্প সেক্টরের সংশিষ্টরা অংশ নেয়। ইআরডি তথ্য মতে, সংশোধিত এডিপিতে প্রধান তিনটি খাত-বিদ্যুত, জ্বালানি ও পরিবহনে ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এ অর্থ কমছে- শুধু বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো থেকে। অর্থাৎ টেকনিক্যাল এসিসটেন্স (টিএ) প্রজেক্টের হিসাব করলে এর অঙ্ক আরও বাড়বে। সূত্র জানায়, পরিবহন বিভাগের জন্য বৈদেশিক অংশে বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪১৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ২১৮৬ কোটি টাকা। অথচ উন্নয়ন বাজেটে সরকারের সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে পরিবহন। এর পরে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিভাগটির জন্য এডিপির বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। বৈঠকে ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা সমর্পণ করেছে বিভাগটি। অর্থাৎ অর্থ ব্যয়ে অপারগতা প্রকাশ করে ফেরত দেয়া হয়েছে। এ হিসাবে এর খাতটির বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ থাকবে ২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। এর পওে রয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এ খাতটির জন্য ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল বৈদেশিক সহায়তা হিসাবে। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ থাকবে ২৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি ২৪৫ কোটি টাকা সমর্পণ করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবতা ও সামর্থ্যের সঙ্গে সমন্বয় না করেই বছরের প্রথম দিকে বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীতে বরাদ্দের অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করতে পারে না সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলো। এজন্য প্রতিবছরই বরাদ্দের বড় একটা অংশ ছেটে ফেলা হয়। তবে বছরের প্রথম থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসলে খুব বেশি অংশ ছেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ত না বলে মনে করেন তিনি। এ অবস্থায় সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোকে এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা ও তৎপড়তা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ইআরডি এবার আগেভাগেই এ সংশোধনীর কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথমে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর চাহিদা পর্যালোচনা করা হবে। এরপর দাতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানা গেছে। বাস্তবায়নের অবস্থা নাজুক হওয়ায় সংশোধন করে এডিপির রেকর্ড পরিমাণ অর্থ সংশোধন করা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চার দিনব্যাপী ধারাবাহিক বৈঠকের প্রথম দিন ছিল ১০ ডিসেম্বর। এদিন সর্বমোট ৩৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান এবং পানি সম্পদ এ তিন খাতের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিল। ভৌত, পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, শিক্ষা ওধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ , গণসংযোগ খাতের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ১৪ ডিসেম্বর। এ খাতের মোট ৩১টি সংস্থা ও বিভাগের শেষদিন ১৫ ডিসেম্বও ৪টি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ অধীনে রয়েছে ২৫টি সংস্থা ও বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়।
×