ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিনেট গোয়েন্দা কমিটির রিপোর্ট

নিষ্ঠুরতা নিয়ে সিআইএর মধ্যেই ছিল মতপার্থক্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

নিষ্ঠুরতা নিয়ে সিআইএর মধ্যেই ছিল মতপার্থক্য

সময়টা ছিল ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর নিষ্ঠুর জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি শুরুর ১০ মাস পরের কথা। সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ বিভাগের প্রধান নিষ্ঠুর জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতিকে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করেন। সহকর্মীদের কাছে পাঠানো ই-মেইলে তিনি এ রকম মন্তব্য করেছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস। সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদ প্রধান নির্যাতনমূলক পদ্ধতির পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি মনে করতেন অব্যাহত নির্মম পদ্ধতি প্রয়োগ সত্ত্বেও কোন কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। তার মতে, সিআইএর অবস্থা এমন একটি ট্রেনের মতো ধ্বংস হতে চলেছে। ই-মেইলে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাকে একটু সময় দিন যেন আমি ট্রেনটিকে ধ্বংস পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি’। সিআইএর নিবর্তনমূলক জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ সফল না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এ ব্যাপারে এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতের মিল ছিল না। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রকাশিত ৫শ’ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ভেতর বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতার ছাপ ছিল। সন্দেহভাজন আল কায়েদা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বিশাল এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোন ব্যবস্থা বা সরঞ্জামাদি ছিল না। মঙ্গলবার সকালে প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময়ে সিআইএর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নির্যাতনমূলক জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি যে কাজে আসছে না সেটি তারা কর্মসূচীটি বাস্তবায়ন শুরুর প্রথম দিকেই স্বীকার করেছিলেন। প্রতিবেদনটি পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, জিজ্ঞাসাবাদ কর্মসূচীর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি ও সহায়ক সরঞ্জামাদি থাকা দরকার সে ব্যাপারে সিআইএর ঘাটতি ছিল। ১৯৭০ এর দশকে চার্চ কমিটির রিপোর্টের পর মঙ্গলবার প্রকাশিত সিনেট কমিটির রিপোর্টটি ছিল এজেন্সির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সমালোচনামূলক। অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দাবৃত্তি বিষয়ে আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ফ্র্যাঙ্ক চার্চ ১৯৭০ এর দশকে ওই রিপোর্টটি প্রণয়ন করেছিলেন। ওই রিপোর্ট প্রকাশের এজেন্সির কর্মকা- বিষয়ে একাধিক আইন প্রণীত হয়েছিল। সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদ প্রধান তাদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে যখন সমালোচনা করেন তার মাত্র সপ্তাহ আগে দুটি মার্কিন দূতাবাস ও নৌবাহিনীর জাহাজে আক্রমণকারী হিসেবে প্রধান সন্দেহভাজন আবদুর রহমান নাশিরির ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ওই সময়ে সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদ প্রধানের পক্ষে বিপক্ষে তার স্টাফরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। নাশিরির ওপর প্রায় দুই মাস ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদ প্রধান মন্তব্য করেছিলেন নাশির মূলত বিশ্বাসভাজন এবং তিনি কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেননি। জেমস ই মিচেল ও ব্রুস জেসন নামে সেনাবাহিনীর দুই সাইকোলজিস্ট সিআইএতে ওয়াটার বোডিং বা মুখ বেঁধে তার ওপর পানি ঢালার মতো নিষ্ঠুর জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগের সুপারিশ করেছিলেন। তার মতে, এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করলে বেশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেশি তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
×