ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

পানির জন্য হাহাকার

বিশ্বব্রহ্মা-ে সুপেয় পানির সঙ্কট বাড়ছে। নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভের পানির স্তর। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকলে খাবার পানির প্রাপ্তিযোগে বিঘœ ঘটছে। ফলে দিন দিন পানীয়জলের ঘাটতি বিশ্বজুড়ে হাহাকার তৈরির পথ প্রশস্ত করছে। বৃষ্টির পানির ব্যবহার অজ্ঞাত থাকায় সঙ্কট পূরণে তা সহায়ক হয়ে উঠতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যও খুব বিপজ্জনক ধরণীর বাসিন্দাদের জন্য। তাঁদের মতে, আগামী বিশ্ব সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়বে পানির জন্য। এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি বাধে, তবে তা পানির জন্যই বাধবে। ‘পানির অপর নাম জীবন’Ñজানে বিশ্বজনে। পানি ছাড়া জীবন এবং জীবনযাপন পুরোপুরি অচল। এক আঁজলা জল পেলে মুমূর্ষু রোগীও ফিরে পায় প্রাণ। আর বাস্তবতায় আজ সেই পানির সরবরাহ ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। পানির উৎস নদী ভরাট ও শুকিয়ে যাওয়া, অত্যধিক পানি আহরণের ফলে ভূ-গর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে এই সঙ্কট বেড়ে চলছে। উপকূলীয় জনজীবনে পানীয়জলের সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে কখনও সখনও। চারপাশে তার লোনাজল। কিন্তু তা পান বা খাওয়া কিংবা ধোয়ার কাজে ব্যবহারযোগ্য নয়, বরং সাগরের পানি শোধন করে পান করার উপযুক্ত করা হয় অনেক স্থানেই। এসব এলাকার মানুষ নির্ভরশীল নলকূপের পানির ওপর। বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রাপ্তি তাদের জন্য মহার্ঘ। নগর জীবনে বোতলজাত খাবার পানি অত্যাবশ্যকীয়র তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে এক দশকের বেশি। তাই গড়ে উঠেছে পানি বোতলজাত কারখানা। এই পানির ব্যবহার ও কদর বিশ্বজুড়েই। চাহিদা যত বাড়ছে, এই পানির দামও তত বাড়ছে। প্রাকৃতিক পানি সংরক্ষণের বিষয়টি সর্বত্র দুর্বল। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার বা সংরক্ষণাগার স্থাপন হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃষ্টির পানি বাড়ির ছাদে ধরে রেখে ব্যবহারের কথা বহুদিন ধরে বলে আসছেন। জীবন ধারণের প্রধানতম উপাদান পানি। আর সেই পানি যদি না মেলে তবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায় জানানোও দুরূহ প্রায়। এত প্রসঙ্গ টানা প্রতিবেশী দেশ সার্ক সদস্য রাষ্ট্র মালদ্বীপের পানি সঙ্কটকে সামনে রেখে। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৬ ফুট উচ্চতার দ্বীপ দেশটির চারদিকে সাগর। সেই পানি শোধন করে পান করে আসছে তারা। সম্প্রতি দেশটির রাজধানী মালের প্রধান পানি শোধনাগারটি অগ্নিকা-ের কারণে বিকল হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় নগরজুড়ে পানির সঙ্কট। খাবার পানির অভাব তাদের রাজপথে নামতে ও সহিংস করে তুলছে। অনেকটা ‘গণঅসন্তোষ’ যেন। সঙ্কট নিরসনে দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে সার্কভুক্ত দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। বিমান ও নৌপথে তারা টনকে টন পানি পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে পানি শোধনের জন্য প্লান্টও পৌঁছেছে দেশটিতে। লোনা পানিকে শোধন করে খাবার পানীয়তে পরিণত করা হবে এই শোধনযন্ত্রে। শীঘ্রই দ্বীপদেশটি সঙ্কট নিরসন করতে পারবে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকচিহ্ন রেখে যাবে পানির জন্য হাহাকার কেমনতর। মালদ্বীপের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পানি সঙ্কট যে কোন সময় বিপন্ন করে তুলতে পারে মানবজীবন। বাংলাদেশও ক্রমশ পানি সঙ্কটের দিকে। খরা মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়। নদীর পানি পানে রোগ শোকে মৃত্যু বাড়ে তখন। তাছাড়া ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নগর জীবনেও পানি সঙ্কট মাঝে মাঝেই ঘটে। পানির জন্য হাহাকার নিরসনে দরকার সার্কভুক্ত দেশগুলোরও সমন্বিত উদ্যোগ।
×