ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমিটি রিপোর্টের পরই সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

কমিটি রিপোর্টের পরই সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ডিগ্রী ও অনার্স মাস্টার্স কোর্স রয়েছে এমন সব সরকারী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এক মাসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ রিপোর্টের পর সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে সভা করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটি বর্তমানে কাজ করছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারী-বেসরকারী কলেজের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে ২১ লাখ। এরমধ্যে ২৭৯ সরকারী কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। স্নাতক পড়ানো হয় এমন ১৮১ সরকারী কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে অনার্স পড়ানো হয় এমন কলেজের সংখ্যা সাড়ে ৫শ’রও বেশি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের এ চিন্তা ভাবনা নিয়ে শিক্ষা সেক্টরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একপক্ষ বলছে, বিষয়টি ইতিবাচক। আরেকটি পক্ষ বলছে, সরকারি কলেজসমূহে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের গুণগত মান উন্নয়ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেখেই সম্ভব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও জনমত যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে বিরোধী পক্ষের দাবি। সূত্রমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এমন সব সরকারী কলেজ উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার চিন্তা ভাবনার অন্যতম কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে দীর্ঘ সেশনজট, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে বিলম্বসহ আরও কিছু বিষয়। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সরকারি কলেজসমূহের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম সরকারি বিধিবদ্ধ নিয়মেই পরিচালিত হয়। সীমিত অবকাঠামোতেই এসব কাজ করতে হয় বলে এক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজস্ব লোকবল দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হয়। এদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সমন্বয় নেই। ফলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে থাকে। সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত লোকবল নিয়ে ছুটি বা অবকাশকালীন সময়েও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন ইনসেনটিভ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসমূহের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নে সরকারী আলাদা কোন বাজেট বরাদ্দও থাকে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লোকবল রয়েছে তাতেও একশ্রেণীর অদক্ষ, রাজনীতিযুক্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্তরা রয়েছেন। সূত্রমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারী কলেজের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় তাতে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে। সম্মানী বা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা না থাকায় কর্মক্ষেত্রে শিথিলতাও চলে আসতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে জড়িত। অনেকের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্লাস বাদ দিয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সঙ্গেও কেউ কেউ জড়িয়ে আছেন। একেকজন শিক্ষক ৬ থেকে ৭ কলেজে বহিঃ পরীক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। একেকজন কমিটি সদস্য গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বও নেন। ফলে ফল প্রকাশে সময় লেগে যায়। এমনকি অতীতে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সমস্যা উত্তরণেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়েছিল।
×