ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক কাজী গোলাম রসুলের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক কাজী গোলাম রসুলের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় প্রদানকারী ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল আর নেই (ইন্নালিলাহি .... রাজিউন)। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে জনকণ্ঠকে জানান তাঁর বড় মেয়ে কাজী নিশাত রসুল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। পরে বৃহস্পতিবার বাদ আছর কাকরাইলের সার্কিট হাউস রোডের টিপটপ জামে মসজিদে জানাজা শেষে সন্ধায় বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে সাবেক এই বিচারককে। নিশাত জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী রবিবার সার্কিট হাউস বাসভবনে মরহুমের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে কাজী গোলাম রসুল গত ২৭ নবেম্বর থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালেই হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি কাজী গোলাম রসুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং তাঁদের সমবেদনা জানান। ঐতিহাসিক রায় প্রদানকারী সাবেক এই বিচারকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গোলাম রসুল এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মামলায় ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি অবসরে যান। পরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ২৩ বছর বছর ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর এই হত্যা মামলায় ২০ আসামির ১৫ জনকে মৃত্যুদ- দেন ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল। রায়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর দুটি রেজিমেন্টের অল্প সংখ্যক জুনিয়র সেনা অফিসার/সদস্য ওই হত্যাকা-ে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন ওই কতিপয় সেনা সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ/নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেনি তা বোধগম্য নয়। এ ঘটনা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আসামিপক্ষের আপীলে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এ মামলায় বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। অন্য বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে পাঁচ আসামি সুপ্রীমকোর্টে আপীল করলে ২০০৯ সালের ১৯ নবেম্বর আপীল বিভাগ তা খারিজ করে এবং পরের বছর ২৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকর হওয়ার পর এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক গোলাম রসুল বলেছিলেন, এখন থেকে আর কেউ এমন জঘন্যতম অপরাধ করার সাহস পাবে না। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বিচার বিভাগে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। আবদুল হামিদ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বিচার বিভাগে গোলাম রসুলের অবদানের কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। স্পীকার, ডেপুটি স্পীকারের শোক ॥ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোকবাণীতে তার মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবাণীতে স্পীকার বলেন, কাজী গোলাম রসুল ছিলেন একজন সুবিচারক। তাঁর প্রজ্ঞা ও কর্মনিষ্ঠা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা দেশ ও জাতি চিরকাল মনে রাখবে। শোকবাণীতে ডেপুটি স্পীকার বলেন, কাজী গোলাম রসুল ছিলেন সময়ের সাহসী সন্তান, বিশিষ্ট বিচারক ও কর্মনিষ্ঠ। তার মৃত্যু দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়া চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজও পৃথক শোক বার্তায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। চীফ হুইপ বলেন, কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন সুবিচারক হারালো। তাঁর মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। কাজী গোলাম রসুল ১৯৪১ সালের ৩১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পটিয়া মহকুমার মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ থাকা অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের ১০ থেকে ১২ দিন পর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। সর্বশেষ তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র লিগ্যাল এ্যাডভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
×