ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাপারেল সামিট

সেমিনারে তৈরি পোশাকের ন্যায্য মূল্য প্রদানের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

সেমিনারে তৈরি পোশাকের ন্যায্য মূল্য প্রদানের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে তৈরি পোশাকের ন্যায্য মূল্য প্রদানে আবারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। সঠিক ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে ক্রেতাদের কাছে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ করাও সম্ভব হবে। এছাড়া এ শিল্পখাত উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক সুদ হ্রাস এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা এ্যাপারেল সামিটের ‘রিইনভেন্টিং দ্যা এ্যাপারেল মডেল: দ্যা রেস টু রেসপনসিবল বায়িং এ্যান্ড প্রোডাক্টটিভিটি এনহ্যান্সমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ মত দেন। এছাড়া এ্যাপারেল সামিট উপলক্ষে এ্যালায়েন্স আয়োজিত অগ্নি নিরাপত্তা প্রদর্শনী জমে উঠেছে। এতে অংশ নিয়েছে দেশীয় ৪৪টি কোম্পানি ও ইউরোপ-আমেরিকার ১০টি দেশের ৪৮টি প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকেই প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ‘দায়িত্বশীল নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহে অধিকতর সাহায্যকারী কি হতে পারে’ এমন প্রশ্ন সম্পর্কিত ভোটাভুটিতেও ন্যায্য মূল্য পরিশোধের বিষয়টি অধিক ভোটে এগিয়ে থাকে। ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সবার আগে জায়গা করে নেয় ন্যায্য মূল্য। ভোটাভুটির সময় দায়িত্বশীল নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ করতে সাহায্যকারী হিসাবে ৭টি বিকল্প দেয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো সস্তায় পণ্য বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশ তাদের সাহায্য করে। কারণ বাংলাদেশ কম মজুরিতে তাদের পণ্য তৈরি করে। গত ১০ বছরে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লেও ক্রেতারা তাদের পণ্যের দাম বাড়ায়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে পোশাক কারখানাগুলোর কাজের পরিবেশ উন্নত করার জন্য এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স কাজ করে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করলেও তারা কারখানাগুলোকে সার্টিফিকেট ইস্যু করে না। সার্টিফিকেট দিলে বিদেশী ক্রেতারা ওই কারখানার প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারে। অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, বহুমুখী কোম্পানিগুলো আমাদের কাছ থেকে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে কি পরিমাণ মুনাফা করে তা অগোচরে থেকে যায়। এটাও শ্রমিকদের জানা থাকা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে, সরকারকে শ্রম আইনের যথাযথ পরিপালন করতে হবে, ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে। তা না হলে শ্রমিকদের ক্ষুধার্ত রেখে কোম্পানিগুলো বেশিদূর যেতে পারবে না। বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর-এর সঞ্চালনায় প্যানেল অলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ভিএফ কর্পোরেশনের গ্লোবাল প্রোডাক্ট সাপ্লাই চেইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট টমাস এ নেলসন, এ্যাকর্ড অন ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালকের উপদেষ্টা মাহমুদ এ আলী (রুমী), আইএফসির বাংলাদেশ, নেপাল ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার কেলি কোহেলফার, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন সেন্টার ফর বিজনেস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সমন্বয়ক সারা লাবোইটজ ও বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম। আলোচনায় ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, উদ্যোক্তাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক, জাইকা, আইএলও, এ্যালায়েন্স ও এ্যাকর্ডসহ অনেকে এগিয়ে আসছে। আগামী ৪Ñ৫ বছরে এই বছরে ব্যয় হবে প্রায় ৪ বিলিয়ন টাকা। টমাস এ নেলসন বলেন, কারখানা রিমেডিয়েশনের জন্য ভিএফ কর্পোরেশনই প্রথম অর্থ বরাদ্দ দেয়। আমরা আইএফসিসহ অন্য সব সংগঠনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। এছাড়া বাংলাদেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও উচ্চ সুদ হার তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রধানত কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া এ্যাপারেল সামিটে বিশ্বের অনেক দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে। তারা এখানে অংশ নিয়ে কল্পনাই করতে পারছে না বাংলাদেশে এতো ভাল কারখানা রয়েছে।
×