ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীত পড়েছে সারাদেশে, রাজশাহীতে সর্বনিম্ন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

শীত পড়েছে সারাদেশে, রাজশাহীতে সর্বনিম্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আকস্মিক শীতের প্রকোপে সারাদেশ। হাড় কাঁপানো না হলেও বছরের প্রথম শীতের তীব্রতা অনুভব করা যাচ্ছে। শীতল বাতাসের সঙ্গে মেঘে ঢাকা সূর্য দিনের তাপমাত্রা সোমবার বেশ কমিয়ে দিয়েছিল। সন্ধ্যার পর তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। যদিও আবহাওয়াবিদরা বলছেন ডিসেম্বরে এভাবে তাপমাত্রা কমে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গ্রামে আরও আগেই শীতের কাঁপুনি শুরু হলেও ঢাকায় সোমবার থেকেই মানুষের গায়ে চড়েছে গরম পোশাক। কেউ কেউ রাজধানীর বিপণি বিতানে গরম পোশাক কিনতেও যাচ্ছেন। নানা রঙের বাহারি গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর কয়েকটি বিপণি বিতান ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম গত সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, ডিসেম্বর মাস হওয়ায় বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। গতকাল এবং আজ কিছুটা শীত পড়লেও আগামীকাল থেকে তা কিছুটা কমতে শুরু করবে। সোমবার রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি মাসের ১৮ এবং ২০ তারিখে আবার কিছুটা তাপমাত্রা কমে আসবে। তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। চলতি বছর তেমন শীত পড়বে না বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন সাইবেরিয়া থেকে এখন আর তেমন শীতল বাতাস আসে না। যা আসে তাও হিমালয়ের ওপর দিয়ে চীন এবং জাপানের দিকে চলে যায়। যে কারণে ওইসব দেশে এখন শীতের তীব্রতা বেশি। আবহাওয়াবিদদের মতে, শীতের শুরুতে সাধারণ পশ্চিমা লঘুচাপটি শক্তিশালী অবস্থায় দেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আর এ লঘুচাপের কারণে যে বৃষ্টিপাত হয় তার ফলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে দ্রুত শীত বয়ে আনে। কিন্তু লঘুচাপটি দুর্বল অবস্থায় থাকলে সাধারণত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় না বা কম হয়। আর বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে শীতের প্রকোপও হঠাৎ না বেড়ে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বিগত কয়েক দিনের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে দেশের আকাশে লঘুচাপটি দুর্বল অবস্থায় বিরাজ করছে। ডিসেম্বর নাগাদ লঘুচাপটি শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনাও কম রয়েছে। এ কারণে আকাশ মেঘলা থাকলেও সহজেই বৃষ্টিপাতের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সার্ক আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, বর্ষার শেষে বিশেষ করে নবেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লঘুচাপের আধিক্য থাকে। এর প্রভাবে যে কোন সময় বৃষ্টিপাত হতে পারে। তিনি জানান বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে দ্রুত শীত নামে। আর যদি লঘুচাপ হাল্কা অবস্থায় থাকে তাহলে শীতের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধির পরিবর্তে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলতি মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে দু’-একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ওই সময় তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রীর মধ্যে নেমে যেতে পারে। একই সঙ্গে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে মৃদু প্রবাহিত হলেও এবার জানুয়ারি মাসের তীব্র ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দেশে তাপমাত্রা বেশ কমে যেতে পারে। ৬ থেকে ৪ ডিগ্রীতে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নবেম্বরের মতো ডিসেম্বরেও দেশে পশ্চিমা লঘুচাপটি দুর্বল অবস্থায় থাকতে পারে। ফলে এ মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এ মাসে শীতের জন্য মূলত শৈত্যপ্রবাহের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক না হলেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। এ ছাড়া এ মাসে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ যোগ হয়ে প্রচ- শীত আঘাত হানতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও মৃদু আকারের বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে গড় তাপমাত্রা সাধারণ ১৮ ডিগ্রীর মধ্যে বিরাজ করে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশের কোন কোন স্থান তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রীরে মধ্যে থাকলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১৬ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তা কিছুটা নেমে ১০ ডিগ্রীতে দাঁড়িয়েছে।
×