ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিবাচক পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতিবাচক পদক্ষেপ

দেশের সরকারী কলেজসমূহে স্ব স্ব অঞ্চলের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংশ্লিষ্ট সবাই এটাকে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সরকারী কলেজসমূহে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নত হবে। এছাড়া সেশনজট দূরকরাসহ সব ধরনের অব্যবস্থা দূর করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি (পাস), অনার্স ও মাস্টার্স পাঠদানকারী সরকারী কলেজসমূহকে পর্যায়ক্রমে তাদের নিজ নিজ এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া সম্ভব হলে দেশে বাস্তবিকই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হবে। প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ ধরনের ২৮০টি সরকারী কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পর এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি লাভবান হবে। আর্থিক কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়ার সুযোগ সব শিক্ষার্থীর হয় না। অনেক গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে একান্ত বাধ্য হয়ে তাদের নিজ নিজ এলাকার সরকারী কিংবা বেসরকারী কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রী পাস, অনার্স কিংবা মাস্টার্সে পড়তে হয়। এটা অবশ্য নেতিবাচক কিছু নয়। কারণ রাজধানী কিংবা রাজধানীর বাইরে অনেক বিখ্যাত কলেজে একসময় লেখাপড়ার মান যথেষ্ট উন্নত ছিল, এখনও কোথাও কোথাও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় অনেকেই যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। আগে অবশ্য নিজ নিজ এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব কলেজ পরিচালিত হতো। পরবর্তীকালে অবশ্য সরকারী নির্দেশে বেশির ভাগ কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয়। এটা অবশ্য কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্যই করে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এর ফল ভাল হয়নি। পর্যায়ক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া সরকারী-বেসরকারী কলেজের সংখ্যা এত বৃদ্ধি পায় যে, সুষ্ঠু পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া দেশের নানা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত প্রায় তিন হাজার সরকারী কলেজের সুষ্ঠু পরিচালনা কিভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব? এত বিপুল সংখ্যক কলেজের দায়িত্ব এতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অব্যবস্থার কারণে এ ধরনের বেশির ভাগ কলেজে লেখাপড়ার মান ও পরিবেশের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। এছাড়া সেশনজট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের ভোগান্তির সীমা নেই। সেশনজটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তের পরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। অভিভাবকদের ওপরও আর্থিক চাপ পড়ে। এছাড়া রয়েছে আরও নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত সরকারী কলেজসমূহকে স্ব স্ব এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে সবাই স্বাগত জানাবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। তবে সরকারী কলেজের পাশাপাশি কিছু বিখ্যাত বেসরকারী কলেজের কথাও ভাবতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী কলেজসমূহের মধ্যে বৈষম্য কারোই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে সব ধরনের অনিয়ম দূর করা প্রয়োজন।
×