ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের মনগড়া দাবি সমালোচনায় বিএমএ নেতৃবৃন্দ

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের মনগড়া দাবি সমালোচনায় বিএমএ নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার॥ বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন অবাস্তব ও মনগড়া দাবি তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেছেন, দেশের সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৬০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন এমন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬৫ জন। আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে পাস করা ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে ২০-এ নামিয়ে আনার দাবি তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখলে মেডিক্যাল শিক্ষা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। এতে মেডিক্যাল শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনিতেই দেশের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম ও মান নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একের পর এক দাবি তুলে সমালোচনার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই ভর্তির সুযোগ দিতে হবেÑ এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এমন দাবি তুলেছিলেন এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। এবার তাঁরা উত্থাপন করেছেন দু’টি দাবি। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে ২০-এ কমিয়ে আনতে হবে। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এ দাবি তুলেন। সংগঠনের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রবিবার পর্যন্ত বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ১ হাজার ২১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। দেশের ৬৩টি বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৬০৫টি। পাস নম্বর না কমালে আসনগুলো শূন্য পড়ে থাকবে। সংগঠনের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য ৪০ নম্বর বেঁধে দেয়া হলেও প্রায় ৮শ’ ছাত্র নম্বর না পেয়েও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনাপত্তিপত্র নিয়ে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না। এদিকে, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন অবাস্তব ও মনগড়া দাবি তুলেছে। দেশের সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৬০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন এমন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬৫ জন। আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মেডিক্যাল ভর্তির ক্ষেত্রে পাস করা ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে ২০-এ নামিয়ে আনার দাবি তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখলে মেডিক্যাল শিক্ষা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসা কখনো বাণিজ্যিক হতে পারে না। কিছুসংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে। কিছু সংখ্যক মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। নতুন কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব জানান, দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টি এবং মানসম্মত কলেজ গড়তে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। আর তা আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক এএসএম আহমেদ আমীন সাংবাদিকদের জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মেধা মূল্যায়িত হবে এমন ন্যূনতম নম্বর নির্ধারিত করা দরকার। এদিকে, মেডিক্যাল ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে অনেক আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীভুক্ত বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ১২০ নম্বর পেতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি-ইচ্ছুকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, এর কম নম্বর নিয়ে ভর্তি হলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হবে না। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তির জন্য আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গৃহীত ভর্তি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১২০ নম্বর পেতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি কোন কোন কলেজ নির্ধারিত ১২০ নম্বরের কম নম্বর প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য কলেজগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হবে বলে জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
×