ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুর্ধ-২১ এএইচএফ কাপ হকি, বাংলাদেশ ৪- ওমান

হকিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

হকিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

রুমেল খান ॥ গ্রুপ পর্বে যে প্রতিপক্ষকে গুনে গুনে সাত গোল দেয়া হয়েছিল, তারাই যদি আবার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়, তাহলে স্কোরলাইন কত হতে পারে এবং কাদের পক্ষে হতে পারে বলুন তো? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, স্বাভাবিকভাবেই গ্রুপ পর্বের বিজয়ী দলেরই জেতার কথা ফাইনালে। সেটা তারা জিতেছেও রবিবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে। তবে গ্রুপ পর্বের মতো এত গোল করতে পারেনি তারা। একটু কম করেছে, এটুকুই যা পার্থক্য। এএইচএফ জুনিয়র হকির বাছাইপর্বের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ওমানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত শিরোপা অর্জন করেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-২১ জাতীয় হকি দল। এর আগে একই দিন সকালে অনুষ্ঠিত তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে চাইনিজ তাইপে ৬-২ গোলে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হলো। টুর্নামেন্টের সেরা দু’দলের একটি হয়ে আগামী ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য অনুর্ধ-২১ এশিয়া কাপে খেলা আগেই নিশ্চিত করেছিল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের মতো ওমানও জুনিয়র এশিয়ান কাপের খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রতিপক্ষ যতই দুর্বল হোক না কেন, তাদের হারিয়ে শিরোপার স্বাদ পাওয়াটা সবসময়ই মধুর। ওমানকে হারিয়ে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের যুবাদের উল্লাসে মাতোয়ারা হতে দেখা গেল। তবে তাতেও যেন পরিলক্ষিত হলো নিয়ন্ত্রিতভাব। সবার হাতেই দেখা গেল বাংলাদেশের মিনি পতাকা। সেটি দুলিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন তারা। গ্যালারিতে উপস্থিত উপচে পড়া দর্শক তখন সমানভাবে আবেগে আপ্লুত। তাদের কেউ সেলফোনে খেলোয়াড়দের ছবি তুলছে, কেউ হাততালি দিচ্ছে, কেউবা পেটাচ্ছে ড্রাম। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চাইনিজ তাইপেকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। এরপর লাল-সবুজের পতাকাবাহীদের জয়রথ ছুটতেই থাকে। একে একে তারা পরাভূত থাইল্যান্ড (১০-০), ওমান (৭-০) ও শ্রীলঙ্কাকে (৭-০)। ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত ওমান। ১ মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পায় ওমান। কিন্তু সহজ সুযোগটি মিস করেন ওমানের আহম্মেদ সাঈদ। ম্যাচের ১০ মিনিটে পিসি পায় বাংলাদেশ। এবার পিসি মিস করেন খোরশেদুর রহমান। ১৬ মিনিটে এই খোরশেদের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। মিলনের কর্নার, সারোয়ারের স্টপ। ড্র্যাগ এ্যান্ড পুশ করে গোল করেন খোরশেদ (১-০)। ২৩ মিনিটে বাংলাদেশের তৃতীয় পিসি। মিলন- সারোয়ার-খোরশেদ কম্বিনেশন। একপর্যায়ে বল পান আশরাফুল। তীব্র হিটে প্রতিপক্ষের পোস্টে বল পাঠান তিনি (২-০)। প্রথমার্ধে এ ব্যবধানেই এগিয়ে থাকে স্বাগতিকরা। ৩৭ মিনিটে পিসি থেকে আবারও খোরশেদ গোল করেন (৩-০)। ৫০ মিনিটে কৌশিকের সহায়তায় ফিল্ড গোল করেন দলীয় অধিনায়ক সারোয়ার হোসেন (৪-০)। বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক অসীম গোপ এ ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন। পুরো ম্যাচে ৬টি সেভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের কৌশিকের একটি গোল বাতিল করে দেন ম্যাচ আম্পায়ার। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের কোচ মামুনুর রশিদকে যেন একটু বিব্রতই মনে হলো। হওয়ারই কথা, কেননা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে দলকে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে রায় দিয়েছিলেন, সেই দলই যদি শোচনীয়ভাবে বাংলাদেশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তো বিব্রত হওয়ার কথা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে ডিফেন্স লাইন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন কোচ, সেই ডিফেন্স লাইন কোন গোল হজম করতে দেয়নি দলকে, বিষয়টি নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কোচ। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভারতে গিয়ে প্রস্তুতিমূলক ৭ ম্যাচ খেলা, কোচ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারা, পর্যাপ্ত অনুশীলন, ইনজুরি ও শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা না থাকা, সর্বোপরি টিম হিসেবে খেলতে পারা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলাকেই দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে মূল কারণসমূহ হিসেবে চিহ্নিত করেন কোচ। এক নজরে এএইচএফ জুনিয়র হকি ॥ চ্যাম্পিয়ন- বাংলাদেশ, রানার্সআপ- ওমান, তৃতীয়স্থান অর্জনকারীÑ চাইনিজ তাইপে, সর্বোচ্চ গোলদাতা- খোরশেদুর রহমান (১০ গোল, বাংলাদেশ), সেরা গোলরক্ষক- অসীম গোপ (বাংলাদেশ), সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়- ইয়ে সি (চাইনিজ তাইপে), ফেয়ার প্লে ট্রফি- চাইনিজ তাইপে।
×