ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘বাংলা সিনেমা থেকেই নতুন ভাষা পেয়েছে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র’

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

‘বাংলা সিনেমা থেকেই নতুন ভাষা পেয়েছে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বারো বছর বয়সে বাবার ক্যামেরা নিয়ে শুরু হয় ছবি তোলা। এরপর আরেকটু পরিণত হলে ঝুঁকে পড়েন স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ে। একসময় জড়িয়ে পড়লেন বিজ্ঞাপন নির্মাণে। আর মননে লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটালেন ১৯৭৩ সালে। নির্মাণ করলেন দর্শককে নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয়া চলচ্চিত্র অঙ্কুুর। এটা ছিল ভারতের ভিন্নধারার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের প্রথম ছবি। নন্দিত এই নির্মাতা যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবে। রবিবার তাঁকে জানানো হয় ট্রিবিউট টু শ্যাম বেনেগাল শীর্ষক সম্মাননা। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলা সিনেমা থেকেই নতুন ভাষা পেয়েছে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র। সেই পঞ্চাশের দশকে সত্যজিতের পথের পাঁচালীর মধ্য দিয়ে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রের স্বতন্ত্র ধারার সূত্রপাত ঘটেছিল। সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন শ্যাম বেনেগাল। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া তথা উপমহাদেশীয় সিনেমার ভাষা বিশ্বের যে কোন সিনেমা ভাষার চেয়ে আলাদা। বিশেষ করে পশ্চিমা চলচ্চিত্রের সঙ্গে এর কোন মিল নেই। সাধারণত সিনেমার কাঠামো মেনে গল্প এগিয়ে চলে। কিন্তু ভারতীয় সিনেমা সম্পূর্ণ আলাদা গতিতে চলে। গল্পই সিনেমার ফর্মকে প্রভাবিত করে এখানে। গান এই সিনেমার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভারতের পাশাপাশি, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সিনেমাকে স্বতন্ত্র করেছে। সঙ্গীতের এই ব্যবহারটি দক্ষিণ এশিয়া ছাড়া অন্য দেশের চলচ্চিত্রে নেই। আবার এই চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানগুলো লিখছেন দেশের বড় কবিরা। ফলে বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাহিত্যমূল্য। সঙ্গীতের এই বিষয়টি আবার শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত। মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-প্রেম, বিরহÑএমন নয়টি আবেগজড়িত নবরসের মধ্যেই আবর্তিত হতে থাকে সেই সিনেমার গল্প। অনেকটা যেন ঐতিহ্য অনুসরণ করে অবচেতনভাবেই তৈরি হয় এসব চলচ্চিত্র। তবে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ভারতীয় মূলধারার জনপ্রিয় এই সিনেমা কাঠামোকে বদলে দেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেন। তাঁদের চলচ্চিত্র জনপ্রিয় ধারার বাইরে হলেও অবজ্ঞা করেনি মূল ধারার সিনেমাকে। এমনকি মূল কাঠামোতে যুক্ত আবেগের নয়টি বিষয়কেও তাঁরা বাদ দেননি। কিন্তু প্রচলিত ধারাকে আমূল বদলে দিয়ে সৃষ্টি করলেন নতুন ধারা। এই চলচ্চিত্রকারদের ছবিতে যেন পাওয়া গেল ভিন্ন কণ্ঠস্বর। তাই বলা যায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি হিন্দীতে নয় বাংলায় ঘটেছে। সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ সেই ধারার প্রথম সিনেমা। যা মূলধারার সিনেমা হয়েও আলাদা। মূলধারার সিনেমা প্রসঙ্গে মজা করে এই পরিচালক বলেন, নায়িকার আসতে দেরি হচ্ছে। ওদিকে অপেক্ষা করছে নায়ক। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর নায়িকা না আসায় নায়ক শুরু করে দিল গান। এভাবে মূলধারার ছবিতে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু মূল বিষয়বস্তুতে প্রভাবিত করে। এর ফলে হারিয়ে যায় গল্পের পরিপূর্ণ নির্যাসটি। ১৩তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে শনিবার ঢাকায় এসেছেন শ্যাম বেনেগাল। আর রবিবার তাঁকে জানানো হয় সম্মাননা। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শর্ট ফিল্ম ফোরাম ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ^বিদ্যালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আলোচনায় অংশ নেন বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সালাউদ্দিন জাকী এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমর রহমান। সঞ্চালনা করেন শর্ট ফিল্ম ফোরামের সদস্য এন রাশেদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, দু’দেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্রকারদের পারস্পরিক আদান-প্রদান ও চলচ্চিত্র বিষয়ক পড়াশোনার মাধ্যমে একটি তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। যারা বাংলাদেশের সিনেমাকে নতুন পথের সন্ধান দেবে। শ্যাম বেনেগালের মতো বিখ্যাত নির্মাতারা যদি আমাদের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে আমরা ভাল চলচ্চিত্র নির্মাতার সন্ধান পাব। শ্যাম বেনেগালকে উদ্দেশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে এই নির্মাতা আসলে সমাজকে নাড়া দেন। এ ছাড়া তাঁর মতো পরিচালকের হাত ধরেই শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল, নাসিরউদ্দীন শাহ ও ওমপুরীর মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রশিল্পী উঠে এসেছে। নির্মাতা পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র শিক্ষক ও সংস্কারক। জনতার সঙ্গে রয়েছে তাঁর সরাসরি সম্পর্ক। এ কথার প্রমাণ মেলে তাঁর ‘মন্থন’ ছবিতে। কৃষকদের কাছ দুই টাকা করে চাঁদা নিয়ে এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন। আর ছবিটি যখন মুক্তি পায়, তখন গাড়িবোঝাই করে সেই কৃষকরা ছুটে গিয়েছিল শহরের সিনেমা হলে। রজনীকান্ত সেনের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ বাঙালীর সুরের ভুবনে এক অবিস্মরণীয় নাম রজনীকান্ত সেন। কিংবদন্তি এই কবি, গীতিকার ও সুরকারকে স্মরণ করা হলো শনিবার। তাঁর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সুরে সুরে নিবেদিত এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে পঞ্চভাস্কর। জবিতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব শুরু ॥ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শুরু হলো ১৩তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৪। তিন দিনব্যাপী এ চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রবিবার সকালে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ও উৎসব কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। বক্তব্য রাখেন রাশিয়ান চলচ্চিত্র সমালোচক সার্গেই আনেশকিন, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ব্যারেন ব্যানেট, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার ডেসিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সমন্বয়কারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ আহম্মেদ হালিম।
×