ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফের নৈশবৈঠক!

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

ফের নৈশবৈঠক!

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারী আমলাদের বৈঠক রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গুলশানে দলীয় নেত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে তুলনা করা হচ্ছে ২০০৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমলাদের ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’ বৈঠকের সঙ্গে; দুটি বৈঠককেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। উত্তরায় আমলাদের গোপন বৈঠক ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের পক্ষে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যালোচনার বৈঠক। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিন আমলারা মুখ ঢেকে তড়িঘড়ি পালিয়ে যান। আর বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠক নিয়ে বিএনপি দলের পক্ষ থেকেই বিপরীতমুখী বক্তব্য আসছে। ঢাকঢাকগুড়গুড় পরিস্থিতিও চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, কোন সরকারী কর্মকর্তাই ওই বৈঠকে ছিলেন না। অপরদিকে দলনেত্রীর প্রেস সচিব বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেছেন, সাবেক ও বর্তমান সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈঠকে আসতেই পারেন। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বৈঠকে যোগদানকারী সচিবালয়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করেছে তাদের ভেতর নেতৃস্থানীয় এক যুগ্মসচিব (ওএসডি) বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। সবমিলিয়ে একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। খোদ বিএনপিও এখন বিব্রত বোধ করছে গোপন বৈঠকের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে পড়ায়। যদিও সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল এর গোপনীয়তা রক্ষার। এজন্য সে রাতে ওই রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকরাও প্রবেশাধিকার পাননি। এ বৈঠক যে গণতন্ত্রের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে বর্তমান সরকার পতনের লক্ষ্যেইÑ এ ধারণার বিপক্ষে বিশেষ যুক্তি নেই। রাতের গোপন বৈঠকের আগে সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত একটি সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রকাশ্যে সরকার পতনের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, আরেকটি ধাক্কা দিলেই সরকারের পতন হবে। আমলাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক সেই ধাক্কারই প্রাথমিক প্রস্তুতি কিনা সেটাই এখন জিজ্ঞাস্য। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট নিয়ে সর্বমহলেই নানা সময়ে নানা জাতীয় শঙ্কা উচ্চারিত হয়। জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ বর্তমানে গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখা দিলেও গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত বড় রাজনৈতিক দলও যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে তার উদাহরণ ইতিহাসে কম নয়। তবে আশার বড় জায়গাটি হচ্ছে এ দেশের মানুষ। এরা গণতন্ত্র আকাক্সক্ষী। গণতন্ত্রকে নস্যাত করার অভিপ্রায়ে কোন ষড়যন্ত্রের সূচনা হলে তার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণে বাংলার মানুষ কখনও পিছপা হয় না। পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ভেতর দিয়ে দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা কাক্সিক্ষত হতে পারে না গণতন্ত্রমনা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছেই। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে রাতের অন্ধকারের পথ ছেড়ে দিনের আলোয় হাঁটতে হবে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বিএনপিতে এখনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আছেন যাঁরা ধ্বংসাত্মক রাজনীতির মুখাপেক্ষী নন। তাঁরা সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে এখনও ভরসা রাখেন। তাঁদের দলকে সুপথে আনার দায়িত্ব তাঁদের ওপরেই বর্তায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে রাষ্ট্রের বিধিলঙ্ঘন করলে তার জন্য আইন রয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উত্তরা ষড়যন্ত্রের হোতাদের মতো গুলশান নৈশ বৈঠকের কুশীলবরা ছাড় পেয়ে গেলে আগামীতে গণতন্ত্রের এহেন আপদের অবসান ঘটবে না। ইতিহাস বলে, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র কখনই জয়ী হয় না; জয়ী হয় গণমানুষের সুন্দর ইচ্ছা ও জীবনমুখী সংগ্রাম।
×