ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাসপাতালের অনুমোদন নেই, ডাক্তার নার্স ভুয়া, ৬ জনের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

হাসপাতালের অনুমোদন নেই, ডাক্তার নার্স ভুয়া, ৬ জনের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালের তিন ভুয়া ডাক্তার, টেকনিশিয়ান, নার্সসহ ছয়জনকে কারাদ-াদেশ দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাদের ৬ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এরা হচ্ছে হাসপাতালের ভুয়া পরিচালক সুজন দাস (৩২), ফিজিওথেরাপিস্ট ডাঃ মোঃ মাসুদ মৃধা (২৮) ও সহকারী ফিজিওথেরাপিস্ট ডাঃ সুমন পালকে (২৪)। তাদের দুই বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডবয় মিতু জয়ধর (২০), সুব্রত বালা (১৯) ও পঙ্কজ চন্দ্র দাসকে (২১) ছয় মাস করে কারাদ- দেয়া হয়েছে। পরে ওই হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়। শনিবার দুপুরে র‌্যাব-২-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এ সময় র‌্যাব-২-এর পরিচালক মেজর নাসিরউদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডাক্তার স্বপন কুমার তপাদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, ভুয়া ডাক্তার ধরতে শেরেবাংলানগর থানাধীন পশ্চিম আগাঁরগাওয়ের বিএনপি বাজার সংলগ্ন ২৭/২ নম্বর শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই হাসপাতালের পরিচালকসহ ৬ ভুয়া কর্মকর্তা ও ডাক্তারকে অর্থ ও কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, পঙ্গু হাসপাতালের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু দালাল রোগী ভাগিয়ে এই ভুয়া হাসপাতালে ভর্তি করায়। অথচ সনদ ছাড়া ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট একাই ওই হাসপাতাল চালান। এছাড়া পরিচালক থেকে শুরু করে বেশ কিছু ডাক্তার থাকলেও তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোন সনদ নেই। আনোয়ার পাশা জানান, অভিযানের সময় দেখা যায়, উক্ত জেনারেল হাসপাতালটি ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া নার্স ও ভুয়া টেকনিশিয়ান চালাচ্ছিল। মাসুম নামে এ হাসপাতালের দায়িত্ব পালনকারী মূল ডাক্তার এইচএসসি পাস করে অপারেশনসহ সব ধরনের রোগী দেখা ও প্রেসক্রিপশন লেখার কাজ করে। ওই হাসপাতালে অপারেশনের ৮ জন রোগী ছিল। ওই ছয়জন মিলে তাদের চিকিৎসা প্রদান করছিলেন। অভিযানের সময় অপারেশন থিয়েটারে ফজলুল হকের পায়ে অপারেশন চলছিল। এ সময় হাসপাতালে কোন ডাক্তার ছিল না। হাসাপাতালের মালিক সুজন এবং তার চাচাত ভাই সুমন মিলে ফজলুল হকের পায়ের ব্যান্ডেজ কেটে প্লাস্টার করছিল। রোগী ফজলুল হক জানান, তিনি ডেকরেটরের দোকানে কাজ করেন। ভ্যান গাড়িতে ডেকরেটরের মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রাইভেটকারের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যায়। পঙ্গু হাসপাতালে গেলে দালালরা তাঁকে এখানে নিয়ে আসে। অদক্ষ ব্যক্তিরা তাঁর পায়ের প্লাস্টার করে। ভুয়া ডাক্তার মাসুম প্রেসক্রিপশন প্রদান করে। এ সময় মোবাইল কোর্টের অভিযানে তারা হাতেনাতে ধরে পড়ে। তিনি আরও জানান, মিলন মোল্লা নামে অপর রোগী এ সময় আরেকটি কেবিনে ভর্তি ছিলেন। পনেরোদিন আগে এখানে তাঁর পায়ের ভেতর পা লাগানো হয়। বড় মাপের এ ধরনের অপারেশনের পর দক্ষ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরী হলেও পরবর্তী সকল চিকিৎসা ও ওষুধ দিচ্ছিল ভুয়া ডাক্তার মাসুম। রোগী মিলন মোল্লা জানান, তাঁর পায়ে এখন পর্যন্ত ব্যথা আছে, ইনফেকশনও হয়ে গেছে। ফরিদপুর থেকে নসিমন দুর্ঘটনায় হাঁটুর ওপর ও নিচে হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে দালালরা তাঁকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখানে ৬০ হাজার টাকার চুক্তিতে চিকিৎসা শুরু হয়। অপারেশন হলেও হাঁটুর ভাঙ্গা হাড় ভাল হয়নি। এ সময় ২ বছর বয়সী দিঘি নামে একটি শিশুকে তার দরিদ্র কৃষক পিতা-মাতা বিক্রমপুরের নিমতলা থেকে নিয়ে আসেন। খেলতে গিয়ে পা ফুলে যাওয়ায় মায়ের পীড়াপীড়িতে পঙ্গু হাসপাতালে আসে। পরে সেখানে থেকে দালালরা এখানে নিয়ে আসে। শিশুর পায়ের এক্সরে করা হয় এবং পায়ে প্লাস্টার করে উক্ত ছয় ব্যক্তি। অভিযানের সময় এক্সরে ফিল্ম পরীক্ষা করে দেখা যায় প্লাস্টার করার মতো কোন কারণ না থাকলেও শুধু টাকার জন্য ছোট শিশুর পায়ে প্লাস্টার করা হয়। শিশুর বাবা দরিদ্র কৃষক পলাশ জানান, মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করে অতি কষ্টে টাকা সংগ্রহ করে তিনি মেয়ের চিকিৎসা করাতে এসে প্রতারিত হয়েছেন। মেয়েকে আরও কষ্ট দিয়েছেন। তিনি অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেন। ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, উক্ত হাসপাতালের অনুমোদন ২০১৩ সালের জুন মাসে শেষ হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদন না দিলেও অবৈধভাবে হাসপাতাল চালিয়ে আসছিল। উক্ত হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি অনেক পুরনো। পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র নেই, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ওই হাসপাতালের টেকনিশিয়ান সুব্রত বালা ও পঙ্কজ চন্দ্র, কর্মরত নার্স পরিচয়ে মিতু জয় কাজ করলেও তার রেজিস্ট্রেশন নেই। মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করে নার্সিং ডিগ্রী ছাড়াই এখানে কাজ করছে। প্রতি দশ বেডের হাসপাতালে তিনজন ডাক্তার ও ছয়জন নার্স এবং তিনজন সুইপার বাধ্যতামূলক হলেও এখানে পাওয়া যায় ৩ জন ভুয়া ডাক্তার, একজন ভুয়া নার্স ও ২ জন ভুয়া টেকনিশিয়ান। ভুয়া ডাক্তাররা হলো মাসুম, সুজন এবং সুমন। সুজন মানবিকে এইচএসসি, সুমন মানবিকে এসএসসি এবং মাসুম বিজ্ঞানে ২য় বিভাগে পাস করে এভাবে প্রেসক্রিপশন লেখা ও অপারেশনের কাজ করছিল। তাদের কারাদ- ও অর্থদ- দিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
×