ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাল সবুজের বিজয় কেতন উড়ছে

চেতনার রঙে উদ্ভাসিত ডিসেম্বর, উৎসব প্রস্তুতি সর্বত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

চেতনার রঙে উদ্ভাসিত ডিসেম্বর, উৎসব প্রস্তুতি সর্বত্র

মোরসালিন মিজান ॥ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/ খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে/ মুক্তির আলো ঐ ঝরছে...। হ্যাঁ, গোটা বাংলায় এখন হাসি রাশি আনন্দ। সর্বত্র লাল সবুজের বিজয় কেতন উড়ছে। সারা বছরই উড়ে। তবে এই সময়টির আলাদা তাৎপর্য। একটু খেয়াল করলে চোখে পড়বে অনেক চেনা দৃশ্য নতুন মাত্রায় উপস্থাপিত হচ্ছে। আরও রঙিন আরও বর্ণাঢ্য হয়ে ধরা দিচ্ছে সব কিছু। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গান কবিতা নাটকে অহর্নিশ যে মুক্তিযুদ্ধ, নতুন ব্যঞ্জনা পেয়েছে। কারণ আর কিছু নয়, এখন ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস। নয় মাস প্রাণপণ লড়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালী। দিনটি তাই গৌরবের। পূর্ব পুরুষের শৌর্য বীর্যের প্রতীক এই দিন। সে কথা মনে রেখে প্রতি বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি উদ্যাপিত হয়। এবারও চলছে সেই প্রস্তুতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজেদের মতো করে অনুষ্ঠানমালা সাজাচ্ছে। সব মিলিয়ে চেতনার রঙে উদ্ভাসিত এখন প্রতি প্রাণ। মোটামুটি ১ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গেছে বিজয় দিবস উদ্যাপন। দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো প্রথম দিন থেকেই তুলে ধরছে গৌরবের এক একটি দিন। মাসটির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে শহীদদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা। বিক্রেতারা লম্বা বাঁশের গায়ে পতাকা সাজিয়ে রাজধানী শহর চষে বেড়াচ্ছেন। পতাকা কেনার পাশাপাশি মুগ্ধ হয়ে পতাকার উড়াউড়ি দেখছেন সবাই। আর কয়েকদিন পর বিক্রি বাড়বে। তাই ব্যস্ত দোকানিরাও। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের এক পাইকারি দোকানে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতার গুদাম ভরে উঠেছে জাতীয় পতাকায়। এত দিয়ে কী হবে? জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান, বিজয়ের মাস। তাই চাহিদা অনেক বেশি। এই পতাকা, লাল সবুজ রং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। একইভাবে বাঙালীর বিজয় ঘোষণা করা হবে বিভিন্ন সভা সমাবেশ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে। প্রস্তুত হচ্ছে সেসব মঞ্চ। আগামী বুধবার থেকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছয় দিনব্যাপী আয়োজনের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক জানান, রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হবে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে। এবারও প্রতিদিন কথা কবিতা সঙ্গীত নৃত্য নাটকের ভাষায় তুলে ধরা হবে একাত্তর। প্রথম দিন ‘মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা’ বিষয়ে বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক অনুপম সেন। আলোচনা শেষে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তৃতীয় দিন ১২ ডিসেম্বর সংগ্রহকারী ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য পাঠ করে শোনাবে। ১৪ ডিসেম্বর মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এদিন শহীদ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের অনুভূতি জানাবেন সংশ্লিষ্টরা। ১৬ ডিসেম্বর বিশেষ আয়োজন থাকবে শিশু কিশোরদের জন্য। বিজয় দিবসের বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবে ছোটদের বিভিন্ন সংগঠন। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে আসবে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ মঞ্চে থাকবে তিন দিনব্যাপী আয়োজন। শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর থেকে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও এ মঞ্চে স্মৃতিচারণ করবেন জল্লাদখানায় নির্মমভাবে নিহত হওয়া মানুষদের আত্মীয় পরিজন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিজয় দিবসে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবের আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। পরদিন থেকে একযোগে উৎসব চলবে টিএসসি সড়ক দীপ, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কিশোর মঞ্চ, ধানম-ি রবীন্দ্র সরোবর, রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসব চলবে মিরপুর, উত্তরা ও ধনিয়া মঞ্চে। জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, এসব মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের গান কবিতা আবৃত্তি নৃত্য নাটক ইত্যাদি পরিবেশিত হবে। উৎসবে শতাধিক সংগঠনের তিন হাজার শিল্পী অংশ নেবেন। বর্তমানে উৎসব সফল করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় বিশেষ আয়োজন থাকবে ছায়ানটে। এদিন রমেশ চন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজন করা হবে গণসঙ্গীতের অনুষ্ঠান। একই আয়োজনে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিজয় দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জাতীয় জাদুঘরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীÑ ১৯৭১ গণহত্যা ও নির্যাতন। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও চূড়ান্ত করেছে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। কর্মসূচী চূড়ান্ত না হলেও, রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজয় দিবস উদ্যাপনের। এ ক্ষেত্রে আলোচনা সভা সমাবেশই হবে মুখ্য। তবে সব মিলিয়ে চমৎকার একটি সময়। বিজয় দিবসের আনন্দই শুধু নয়, সর্বত্র এক ধরনের জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই জাগরণের জয় হোক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠুক আগামীর বাংলাদেশ।
×