ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মরিয়া প্রমাণ করিল...

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

মরিয়া প্রমাণ করিল...

রশিদ মামুন ॥ ঢামেক জরুরী বিভাগ সংলগ্ন রাস্তা দুপুরবেলা, ভিড়ভাট্টা। মানুষের জটলার মধ্যে পড়ে আছেন একজন বৃদ্ধা। নানান জনের নানা মন্তব্য। গাড়ির হর্ন। দরজা খুলে নেমে এলেন পরিচালক। আনসারদের বাঁশির শব্দ। উর্দি দেখে সরে দাঁড়ান জনতা। এতক্ষণে চলে এলো ট্রলি। পিছন পিছন ওয়ার্ড বয় আরও লোক লস্কর। পরিচালক (স্বগত) কি করে হয় এসব। জরুরী বিভাগের কাছে এভাবে কাউকে পড়ে থাকতে দেখলে উফ্, মিডিয়া প্রেস না না, কোন দিকে কারও নজর নেই। (ধমকে ওঠেন) উঠা উঠা উঠা। বৃদ্ধাকে নিয়ে ট্রলি চলে যায়। পরিচালক গাড়িতে চেপে বসেন। হাসপাতালে প্রবেশ। হারিয়ে গেলেন হাজার কাজের ভিড়ে। ৮০২ নম্বর ওয়ার্ড, ইউনিট নং-৭, দুপুরের পর পর। চিকিৎসা চলছে সেই বৃদ্ধার। বড্ড অনাদর আর অবহেলা। ওয়ার্ড বয় একটি স্যালাইন পুশ করছে। একজন চিকিৎসক প্রবেশ করলেন। চিকিৎসক- একলাফে বেডে দিয়ে দিলিরে। কি দিলি। হুম ঠিক আছে এইটাই চলুক। দুর্বল অতিরিক্ত দুর্বল। খায়নি মনে হয়। রোগী- (সুযোগ পেয়ে) স্যার দেখেন আমি সাত দিন ধইরা ভর্তি এখনও মাটিতে শুয়ে আছি। ওয়ার্ড বয়- ওই মিয়া গিয়ে ফুটপাথে শুইয়া পড় স্যার দেখলে আবার ভর্তি কইরা দিবো তহন বেড দিমুনে। যত্তসব। রোগী- স্যার আমি কী যামু ফুটপাথে। চিকিৎসক ভ্রƒ কুচকে তাকালেন। বিরক্তি ভরে প্রস্থান। ওয়ার্ড বয়- ওই মিয়া তোমাগো নিয়া আর পারি না। তুমি যে সিট পাও না এইটা ক্যান পাও না? তোমার দোষে পাও না। ঠা-ার মধ্যে মাটিতে থাক, তোমার কষ্ট হয় না। আহারে আমার কিন্তু তোমাগো এই কষ্ট সহ্য হয় না। কিন্তু তোমারাতো বোঝই না যে তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না। শোন এই যে হাসপাতালে আইসা তুমি একটা হুইল চেয়ারে উঠলা। রোগী- উঠছিলামতো। দারুণ মজা হাঁটা লাগে না। কিন্তু ঢাকা শহরের ট্যাক্সি ক্যাবের চেয়ে ভাড়া বেশি। ওয়ার্ড বয়- কত দিছিলা? রোগী- ৫০ টাকা ওয়ার্ড বয়- তোমারে একজন ধাক্কাইতে ধাক্কাইতে নিয়ে আসলো, দিছিলা কিছু? রোগী- গাড়ির ভাড়া দিছি আর ড্রাইভার মাংনা নেকি। আরও ৫০ টাকা। ওয়ার্ড বয়- ওরে বোকারে এইটাতো সিস্টেম তোরে শিখানো হলো। তাইলে সিট কী তুই মাংনা পাবি। দুইশো বাইর কর দুইশো বারবার। আর শোন ওই যে ১২ নম্বর বেডটা খালি হবে। ঘণ্টাখানেক পরে যাইয়াই শুয়ে পড়বি। আমি বলে দিচ্ছি। রোগী- দাঁড়িয়ে থাকে। ফ্যালফ্যাল চাহনিতে (স্বগত) এরই নাম নেকি সরকারী হাসপাতাল। তাও বেসরকারীর চেয়ে ভাল এগো টাকা দিয়ে উঠতে পারলে হইলো তারপর ভাড়া তেমন লাগে না। স্থান- ৮০২ নম্বর ওয়ার্ড, ইউনিট নং-৭ সেই বৃদ্ধার কোন নড়াচড়া নেই। ওয়ার্ড বয় এসে দাঁড়ালেন। হাতটা তুলে ধরলেন নাড়ি দেখার জন্য। সেভাবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কনফিউজড। মরেছে না মরে নাই। দৌড়ে গেলেন চিকিৎসকের কাছে। ওয়ার্ড বয়- স্যার রোগীতো ওইটাগেছে গ্যা। চিকিৎসক- কোনটা, কই গেল ওয়ার্ড বয়- মরছে স্যার। ডাইরেক্টর স্যারের রেফারেন্স। চিকিৎসক- বলিস কি। কি ওষুধ দিছিলি। ওয়ার্ড বয়- ওই যে স্যার স্যালাইন দিলাম আপনি বল্লেন ঠিক আছে। চিকিৎসক- হ্যাঁ ঠিকইতো আছে। দুর্বল হইলেতো স্যালাইনই দেয়া লাগবে। আর কোন ওষুধ দেয় নাই? ওয়ার্ড বয়- স্যার আপনিতো দেখলেনই না। চিকিৎসক- দুর ব্যাটা আমারে মনে করায় দিবি না। (বৃদ্ধার কাছে গিয়ে গভীর মনোনিবেশ) ওয়ার্ড বয়- স্যার পালাসটা একটু দেখবেন নেকি। চিকিৎসক- নারে নাই। আমি দেখলে আর কি বাঁচে। তুই দেখছিস না। আত্মীয় স্বজন কেউ আছে। ওয়ার্ড বয়- না চিকিৎসক- ডেথ সার্টিফিকেটটা নিয়ে আয় সাইন করে দিচ্ছি। সই হয়ে গেল ডেথ সার্টিফিকেটে। এবার বৃদ্ধার গন্তব্য মর্গ। স্থান-মর্গ, সন্ধ্যা ছুরি কাঁচি, হাতুড়ি ছেনির ঘর্ষণ। শরীর শিহরিত করে। মনে হয় মৃত ব্যক্তিও একটু পর দৌড়ে পালাবেন। বাংলা খেয়ে তৈরি হচ্ছেন ডোম। এবার জীবনে দুই হাজার নম্বর পূর্ণ করবেন। বুঝিয়ে দেয়া হলো তাকে। এখান থেকে এখানে তারপর মাথাটা। নড়ে উঠলেন বৃদ্ধা। ডোম নূর আলম ঢুলু ঢুলু চোখে আলম- কিরে নড়ে ক্যান। আজিজ- আরে ভাই পাঠাইছে কাইটা দেন। ডাক্তার কইতাছে মইরা গেছে আপনি কি ডাক্তারের চেয়ে বেশি বোঝেন? আমার কাছে ডেথ সার্টিফিকেট আছে। আলম- নারে কিন্তু মনেতো হয় তাজা। আজিজ- (ভাল করে দেখে) আসলেইতো নড়ে। আলম- ফোন লাগা ফোন লাগা ফোন লাগা। তাজা মানুষ পাঠায় দিছে। না বুইজা কোপ দিলে কি হইতো এখন। ফোনে কথা শেষ হতেই ছুটে আসলেন ওয়ার্ড বয় সঙ্গে সেই চিকিৎসক। ছিনিয়ে নিলেন ডেথ সার্টিফিকেট। ওয়ার্ড বয়- স্যার তাড়াতাড়ি ধরেন। জানাজানি হইলে কিন্তু আপনি আমি দুইজনই ফায়ার। চিকিৎসক- মরা মানুষ জিন্দা হয় এইটাতো চিকিৎসা বিজ্ঞান সাপোর্ট করে না। বিষয়টা কিন্তু চাইপা রাখিস। অবশ্য এইটা আমার জন্য সুনামও হইতে পারে। মানুষ যদি মনে করে ওই ডাক্তারের দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লেখাইলে মরা মানুষ জিন্দা হয়, তাইলে আমার মান্ডার চেম্বার টোটাল হাউজ ফুল। ওয়ার্ড বয়- ওই মিয়া ধরেন। বৃদ্ধাকে ধরাধরি করে নেয়া হলো হাসপাতালে। কিন্তু চেপে রাখা ঘটনা আর চাপা থাকলো না। পরের দিন পত্র পত্রিকা ঠিকই ফাঁস করে দিলো। আর টনক নড়লো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। নানা রকম ব্যাখ্যা দিলেন কিন্তু জীবিত বৃদ্ধাকে মৃত সাজানোতে তাঁরা নিজেও যে বিব্রত তা বোঝাই যাচ্ছিলো। এর পরের দিন ওই বৃদ্ধার দ্বিতীয়বার মৃত্যু হলো। এবার মিত্যুটা সত্যি। আগের মতো বানানো নয়। কিন্তু সমালোচনার জবাবতো দিতে হবে। একাজ যে দুনিয়াতে তারাই প্রথম করেছেন এমনতো হয়। বিশ্বজুড়ে এমন ভূরি নজির রয়েছে। সেই পরিচালক এবার এভাবে ঘটনার বর্ণনা করছেন। পরিচালক- দেখুন আমরা বলছিতো এমন ঘটনার জন্য দায়ীদের ছাড়া হবে না। আর এই রোগীকেতো আমরাই হাসপাতালে তুলে এনেছিলাম। আপনারা সাংবাদিকরাতো আনেন নাই। সুতরাং রোগী বেঁচে আছে না মওে গেছে এ কথাতো আমরা বলবো। আপনারা ক্যান ভাই ভ্যাজাল বাঁধান। আর এই ঘটনা যে দুনিয়াতে ঢামেকে প্রথম ঘটেছে এমনতো নয়। জানেন কিছু জানেন এইসব বিষয়ে। শোনেন কেনিয়াতে কি হইছিলো গত জানুয়ারিতে পল মুতোরা বিষ খাইছিলো। নাইরোবির কাছে নাইভাশা সদর হাসপাতালের এক দল ডাক্তার তারে বল্ল মরে গেছে। ডোম ছুরি চালাইতে যাবে। তখন পল চোখের পলক ফেলে কথা বলে। পড়ে নাই পলের চোখের পলক। বোঝেন কি কেলেঙ্কারি। জানেন না তাই উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন, শোনেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের অস্টিন হাসপাতাল একবার কি করছিলো, কি করছিলো। দুইশো জন জানেন দুইশো জন তাজা রোগীর বাড়ি খবর পাঠাইছিলো তারা সকলে মারা গেছে। জানেন না শোনেন না খামাখা প্রশ্ন করেন। ফ্রিজ। [সমস্ত চরিত্র ঘটনা কাল্পনিক। সত্য ঘটনার সঙ্গে মিলে যাওয়া কাকতালীয়।]
×