ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

২৮০ সরকারী কলেজ পাবলিক ভার্সিটির আওতায় আসছে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

২৮০ সরকারী কলেজ পাবলিক ভার্সিটির আওতায় আসছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ডিগ্রী (পাস), অনার্স ও মাস্টার্স পাঠদানকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারী কলেজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে স্ব স্ব অঞ্চলের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধরনের ২৮০টি কলেজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার কাজও শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কলেজগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়ন, সেশনজট নিরসনসহ সব ধরনের অব্যবস্থাপনা দূর করাই কলেজ হস্তান্তরের মূল লক্ষ্য বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট কলেজ সকল পক্ষই বলছেন, সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কলেজ পরিচালনা করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারী কলেজগুলোকে যদি বিভাগীয় পর্যায়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া যায় তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোঝাও কমবে আবার শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা শিক্ষার জন্য খুবই বড় একটি কাজ হবে। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিকেন্দ্রীকরণ করছি। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারী কলেজগুলোকে নেয়ার কাজ করছি। বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই তা বাস্তবায়ন হবে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কোন শিক্ষার্থীর বোঝা বহন করতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ আপত্তির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সকলে বসলেই বিষয়টির সমাধান হবে। যদি কারও কোন মতামত থাকে তারা তো তা সেখানেই বলবেন। তবে শিক্ষার জন্য যা ভাল আমরা তাই করব। জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কখন ও কিভাবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। শুরুতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে শিক্ষার্থীদের বোঝা ঘাড়ে নিতে চায় না বলে মত দিলেও এখন অনেকেই এ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বেলা ১১টায় পাবলিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বৈঠকে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কমিশনের বিভাগীয় প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। কমিশন বলছে, সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে যেসব বিভাগ বা বড় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেসব এলাকার সরকারী কলেজসমূহ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে বলে নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর দিকনিদের্শনা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধ করে। এরপরই আজকের বৈঠক। চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে শিক্ষার উন্নয়নে খুবই বড় পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারী কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে পারলে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষার মান বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে বোঝা কমবে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পজেটিভ। তারাও চায় শিক্ষার মানোন্নয়ন। অনেক উপাচার্যই এ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছেন। সকলে মিলে বৈঠকে বসলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়রা মতামত দেবেন। বিষয়টি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলছিলেন, রবিবারই (আজ) আমরা এ বিষয়ে প্রথম বৈঠকে বসব। বৈঠকে বসলে নিশ্চয়ই প্রত্যেকে তাদের মতামত দেবেন। তবে আমার মনে হয় সরকারী বেসরকারী হাজার হাজার কলেজ পরিচালনা করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কঠিন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতির ভেতরে চলে আসলে সরকারী কলেজগুলোর শিক্ষার মান অনেক বাড়বে। শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। করতে পারলে এটি হবে শিক্ষার জন্য বড় পদক্ষেপ। জানা গেছে, ২৮০টি সরকারী কলেজ সারাদেশের ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোন কলেজ যাবে সে তালিকা এখনও হয়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সহযোগিতা চাইবে। তবে সরকারের অবস্থান যতই ইতিবাচক হোক না কেন কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই নতুন করে শিক্ষার্থীর বোঝা বহন করতে রাজি নন। উপাচার্যদের অনেকেই বলছেন, তারা এমনিতেই নিজেদের শিক্ষার্থী নিয়ে চলতে পারছেন না ভালভাবে। তার ওপর আছে আন্দোলনসহ নানা সঙ্কট। এ অবস্থায় নতুন করে শিক্ষার্থীর বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারী কলেজে শিক্ষার্থী আছে সাত লক্ষাধিক। তবে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা আশা করছেন সকলে বৈঠকে বসলে উপাচার্যদের মনোভাব পরিবর্তন হবে। সূত্রগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেসরকারী কলেজগুলো পরিচালনা করবে। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু সরকারী কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এসব কলেজ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন আছে তেমনই থাকবে। এক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল কলেজগুলো পরিচালনার ভার। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর সব কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পায় এটি।
×