ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ালটন বিজয় দিবস রাগবি প্রতিযোগিতা

শুরু হলো মহিলা রাগবির পথচলা...

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

শুরু হলো মহিলা রাগবির পথচলা...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবার থেকে ঢাকার পল্টন ময়দানে শুরু হয়েছে ‘ওয়ালটন হোম এ্যাপ্লায়েন্স বিজয় দিবস রাগবি প্রতিযোগিতা।’ উল্লেখ্য, এটিই হচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম কোন মহিলা রাগবি টুর্নামেন্ট। লীগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিভাগের খেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪৭-০ পয়েন্টে ইমপিরিয়াল রাগবি ক্লাবকে, ফ্লেইম বয়েজ রাগবি ক্লাব ১৭-০ পয়েন্টে মিরপুর রাগবি ক্লাবকে, সেনাবাহিনী ৪৭-০ পয়েন্টে মিরপুর রাগবি ক্লাবকে এবং ফ্লেইম বয়েজ ২২-৫ পয়েন্টে ইমপিরিয়াল রাগবি ক্লাবকে হারায়। মেয়েদের বিভাগে ফ্লেইম রাগবি ক্লাব ৩৫-৫ পয়েন্টে কবি নজরুল কলেজ রাগবি ক্লাবকে, সেন্ট্রাল উইমেন্স ক্লাব ১৫-০ পয়েন্টে মিরপুর রাগবি ক্লাবকে, ফ্লেইম ক্লাব ৪২-০ পয়েন্টে মিরপুর ক্লাবকে এবং কবি নজরুল কলেজ ১০-৫ পয়েন্টে সেন্ট্রাল উইমেন্সকে হারায়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাব হোসেন। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন আর বি গ্রুপের এডিশনাল ডিরেক্টর এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) এবং ওয়ালটনের স্পোর্টস এ্যাম্বাসেডর জোবেরা রহমান লিনু। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী, টুর্নামেন্ট কমিটির (মহিলা) সম্পাদক পারভীন পুতুল, সিরাজুল ইসলাম (পুরুষ)। প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিভাগে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফ্লেইম বয়েজ রাগবি ক্লাব। মেয়েদের বিভাগে ফাইনালে উঠেছে ফ্লেইম রাগবি ক্লাব ও কবি নজরুল কলেজ রাগবি ক্লাব। শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের ফাইনাল খেলাটি। ছেলেদের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। ফাইনাল শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তজমুর আলী। (বাক প্রতিবন্ধী এই বীর সন্তান জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধীনায়ক জেনারেল ওসমানীর ঘনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য)। বিশেষ অতিথি থাকবেন আর বি গ্রুপের এডিশনাল ডিরেক্টর এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন)। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, এটা সবাই জানে। তবে এর পরের স্থানটি কোন খেলার? বেশিরভাগ ক্রীড়াপ্রেমীর মতে, দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলাটি হচ্ছে রাগবি। বিশ্বের অনেক দেশই আছে, যাদের জাতীয় খেলাই হচ্ছে রাগবি। যেমন জর্জিয়া, মাদাগাস্কার, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, ওয়েলস প্রভৃতি। এছাড়া ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশ আছে, যেখানে এ খেলাটি অন্য অনেক খেলার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ ফুটবল খেলা থেকেই জন্ম হয়েছে রাগবির! মূলত খেলাটি হচ্ছে ফুটবল ও হ্যান্ডবল খেলার সংমিশ্রণ। ১৮২৩ সালে যুক্তরাজ্যের মিডল্যান্ডে রাগবি নামক একটি স্কুলে ফুটবল খেলা চলছিল। খেলার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী উইলিয়াম এলিস পায়ের বদলে হাতে বল নিয়ে বিপক্ষ দলের সীমার দিকে ছুটতে থাকে। আর এভাবেই রাগবি খেলার জন্ম হয়! স্কুলের নাম অনুসারে খেলাটির নাম দেয়া হয় রাগবি। ১৮৬৪ সালের আগে রাগবি খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ১৮৮০ সালে ব্রিটেনে খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৮৭৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ১৮৮২ সালে জাপান, কানাডা এবং আর্জেন্টিনায় ১৮৯৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক রাগবি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠিত হয়। সংস্থাটি বিভিন্ন আইন-কানুন পরিবর্ধিত করে সারা বিশ্বে এর প্রসারণের জন্য কাজ করে। ১৯৫৪ সালে প্রথম রাগবি ওয়ার্ল্ডকাপ অনুষ্ঠিত হয়। পরিচিত হতে থাকে দেশে দেশে। জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করে নেয় বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশে রাগবির শুরুটা হয় বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের (ইউনিয়ন) সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলীর মাধ্যমে। ২০০৪ সাল থেকে রাগবি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৬ সালে তাঁর চিন্তা থেকেই খন্দকার জামিলউদ্দিনকে সভাপতি করে রাগবি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। শুরুটা ছিল দুঃখ-কষ্ট ও অন্ধকারের পথচলা। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয় রাগবিকে। ২০০৬ সালের অক্টেবরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এ্যাসোসিয়েশন হিসেবে অনুমোদন লাভ করে বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়ন। কিন্তু দীর্ঘ সময় খেলাটি প্রসারের জন্য মাঠ সুবিধা পায়নি। নটরডেম কলেজের মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম, মোহামেডোন ক্লাবের মাঠে এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মাঠে রাগবি খেলা চালিয়ে যেতে হলেও কখনই হতোদ্যম হননি মৌসুম। শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন, এ খেলাই দর্শক হবে না। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়। প্রতিটি রাগবি ম্যাচেই ছিল উপচেপড়া দর্শক। আর এখন তো মেয়েরাও শুরু করেছে এ খেলাটি খেলতে। ৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার, ২০১৪ তারিখটি তাই একটি স্মরণীয় ও মাইলফলকের দিন হয়ে থাকবে বাংলাদেশের মহিলা রাগবির ইতিহাসে।
×